রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী
Rabindranath Tagore Biography
নাম
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/Rabindranath Tagore
|
জন্ম
|
৭ই মে ১৮৬১, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা
|
অভিভাবক
|
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (বাবা)
সারদাসুন্দরী দেবী (মা)
|
ছদ্দনাম
|
ভানুসিংহ
|
দাম্পত্যসঙ্গী
|
মৃণালিনী দেবী
|
পেশা
|
কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, গল্পকার
|
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী
|
গীতাঞ্জলী, রবীন্দ্র রচনাবলী, গোরা, আমার সোনার বাংলা, ঘরে বাইরে প্রভৃতি
|
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার
|
নোবেল পুরস্কার (১৯১৩)
|
মৃত্যু
|
৭ই আগস্ট ১৯৪১
|
মৃত্যুস্থান
|
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা
|
বাংলা সাহিত্য জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের সকলের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | তাঁর লেখা অসাধারণ সব কবিতা ও গান, আজও প্রত্যেকটা বাঙালীর সমানভাবে মন কাঁড়ে | তিনি শুধু একজন শ্রেষ্ঠ গল্পকারই ছিলেন না, সেইসাথে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিকও |
Early Life of Rabindranath Tagore:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয় ৭ই মে ১৮৬১ সালে, পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা শহরে অবস্থিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে | তাঁর বাবার নাম ছিলো মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি কিনা ব্রাহ্মসমাজের একজন ধর্মগুরু ছিলেন এবং তাঁর মায়ের ছিলো নাম সারদাসুন্দরী দেবী |
তুমি হয়তো জেনে এটা অবাক হবে যে, রবীন্দ্রনাথ কিন্তু তাঁর বাবা মায়ের ১৪তম সন্তান ছিলেন | তাঁর সকল ভাই ও বোনদের নাম ছিলো যথাক্রমে- দ্বিজেন্দ্রনাথ, গণেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রনাথ, বীরেন্দ্র, সৌদামিনি, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, সুকুমারী, পুনেন্দ্র, শরৎকুমারী, বার্ণকুমারী, সোমেন্দ্র, বুধেন্দ্র ও গগেন্দ্রনাথ|
এরপর ১৮৭৫ সালে যখন রবীন্দ্রনাথের মাত্র চোদ্দ বছর বয়স, তখন তাঁর মায়ের অবশেষে মৃত্যু ঘটে | স্ত্রীয়ের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও বেশি জোড়াসাঁকোর বাড়িতে থাকতেন না | দেশভ্রমণের নেশায়, বছরের অধিকাংশ সময়ই কলকাতার বাইরে তিনি অতিবাহিত করতেন |
এরফলেই ছোট্ট রবীন্দ্রনাথের শৈশব জীবন, ভৃত্যদের অনুশাসনে কেটেছিলো |
Education of Rabindranath Tagore:
ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ কোলকাতার বিভিন্ন স্কুলে কিছুদিনের জন্য পড়াশোনা করেন | যেই স্কুলগুলোর নাম ছিলো যথাক্রমে- ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট |
কিন্তু এতগুলো নামী স্কুলে পড়ার পরেও, তিনি কোনো স্কুলে বেশিদিন টিকতে পারেননি | এর পিছনে অবশ্য প্রধান কারণ ছিলো তাঁর স্কুল শিক্ষার প্রতি অনীহা | জানা যায়, স্কুলের চার দেওয়ালের বদ্ধ পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর এই রীতি তাঁকে মোটেই পড়াশোনা শেখার প্রতি আকৃষ্ট করতো না |
Real Photo of Rabindranath Tagore (Credit- Wikipedia)
এইজন্যই পরে, বাড়ির খোলা পরিবেশে পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো |
তাঁর এই অদ্ভুত আচরণের উদ্ভব হয়, তাঁর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই | শোনা যায়, ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতেও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন | সেইসময় প্রকৃতিই ছিলো যেন তাঁর জীবনের প্রধান আকর্ষণের বিষয় |
আরো পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তিসমূহ
এরপর ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সেখানে ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলেও ভর্তি হন তিনি | তারপর ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন কিন্তু সাহিত্যচর্চার প্রতি আকর্ষণের কারণে তিনি সেই পড়াশোনা আর শেষ করতে পারেননি |
Marriage of Rabindranath Tagore:
ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আশার পর, অবশেষে ১৮৮৩ সালে ৯ই ডিসেম্বর তারিখে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় বেণীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে | বিয়ের সময় ভবতারিণীর পুণরায় নামকরণ করা হয় এবং তাঁর নাম পাল্টে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী |
Rabindranath With Mrinalini Devi (Credit- Wikipedia)
পরবর্তীকালে, মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের মোট পাঁচ সন্তান হয় | তাঁদের নাম যথাক্রমে ছিলো- মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭) |
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথ মারা যায় |
Career of Rabindranath Tagore:
ভারতী পত্রিকায় ১৮৭৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশ করেন | সেগুলো ছিলো ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা আর ভিখারিণী ও করুণা নামে দুটো সুন্দর ছোটগল্প | এগুলোর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায় |
এরপর ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “কবিকাহিনী” | এছাড়াও পরে তিনি রচনা করেছিলেন “সন্ধ্যাসংগীত” নামক আরেকটি কাব্যগ্রন্থ । “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” নামে লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থেরই অন্তর্গত ছিলো ।
এরপর একে একে “সন্ধ্যাসংগীত” কাব্যগ্রন্থ রচনার পর তিনি প্রভাতসংগীত, মানসী (১৮৯০), সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০), নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলী (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪), বলাকা (১৯১৬), শ্যামলী (১৯৩৬) প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন |
রবীন্দ্রনাথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থ হল গীতাঞ্জলী (Song Offerings), যেটার জন্য তিনি সারা বিশ্বে বিশাল জনপ্রিয়তা পান | আর এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন ।
তিনি ছিলেন এমন একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক যাঁর হাতেই বাংলা প্রবন্ধ, রচনা, কবিতা, ছোটগল্পের বিপুল প্রসার ঘটে | তাঁর এইসব সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ধারণা পাওয়া যায় |
তিনি কিন্তু শুধু কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প কিংবা উপন্যাস লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না | বিভিন্ন জীবনীমূলক ও ভ্রমণ কাহিণী লেখাতেও তিনি ছিলেন সমানভাবে পটু | তাঁর বিখ্যাত কিছু আত্মকথামূলক গ্রন্থ হলো – জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩)|
Establishment of Shantiniketan & Vishva Bharti:
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বছর আগে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে, এক বিশাল জমি কেনেন | সেখানে তিনি ১৮৮৮ সালে একটা আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটা ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন |
বাবার সেই কেনা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরী করতে চেয়েছিলেন | তাই প্রথমে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন “পাঠ্য ভবন” নামে একটা স্কুল, যেটা বাকি সব স্কুলের থেকে বেশ আলাদা ছিলো | কারণ সেই স্কুল ছিলো সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নীচে একটা গাছের তলায় |
Mahatma Gandhi With Kaviguru
পরে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি সেই স্কুলকে আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে সেটাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন | যেটার পরবর্তীকালে নাম রাখেন তিনি “বিশ্বভারতী” যা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় |
সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি আবার ১৯২৪ সালে আরেকটি শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন যেটা ছিলো “শিক্ষা সত্র” | তিনি এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন |
World Tour of Rabindranath Tagore:
জীবনাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১২বার বিদেশ ভ্রমণ করেন | তিনি মোট পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে | ১৯২০ থেকে ১৯২১ সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান তিনি । ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান চীন সফরে, তারপর সেখান থেকে জাপানে গিয়ে সেখানে জাতীয়তাবাদ বিরোধী বক্তৃতা দেন |
আরো পড়ুন: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ সহ তাঁর চার সঙ্গীকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে গেছিলেন ১৯২৭ সালে | তারপর তিনি একে একে ভ্রমণ করেন সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইরাক ও পারস্য প্রভৃতি দেশে | ১৯৩৪ সালে শ্রীলঙ্কা যাত্রাই ছিলো কবিগুরুর শেষে বিদেশ যাত্রা |
Interesting Facts About Rabindranath Tagore:
- মাত্র আট বছর বয়স থেকেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন |
- তিনি চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে একদম তুচ্ছ মনে করতেন এবং সেই চিরাচরিত শিক্ষার অধীনে থেকে পড়তে ভালোবাসতেন না |
- তিনি ভারতীয় সাহিত্য ও কলায় বিপ্লবের উদ্দেশ্যে, বাংলায় নবজাগরণ আন্দোলন শুরু করেছিলেন |
- তাঁর সাথে পৃথিবী বিখ্যাত জার্মান বৈজ্ঞানিক আলবার্ট আইনস্টাইনের গভীর সম্পর্ক ছিলো এবং দুজনেই সেইসময় নোবেল পুরস্কার জয়ের পর একে অপরের প্রশংসাও করেন |
- বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক সত্যজিৎ রায়, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক কর্মকান্ডে বিশেষভাবে প্রভাবিত হন | “পথের পাঁচালী” সিনেমায় পরিচিত সেই ট্রেনের দৃশ্য, আসলে কবিগুরু রচিত “চোখের বালিতে” বর্ণিত একটা ঘটনার থেকে অনুপ্রাণিত ছিলো |
- রবীন্দ্রনাথ একজন মহান সুরকারও ছিলেন | তিনি প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গান নিজে রচনা করেছিলেন |
Awards and Achievements of Rabindranath:
- ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শান্তিনিকেতনে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে “ডক্টরেট অব লিটারেচার” সন্মানে ভূষিত করে |
- বিদেশে তাঁর রচিত গীতাঞ্জলী কাব্য, বিশেষ জনপ্রিয়তা পায় | সেই সুবাদে তাঁকে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সন্মানিত করা হয় |
- ১৯১৫ সালে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধি পান | কিন্তু ১৯১৯ সালে ঘটে যাওয়া জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের পর তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন |
- ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের আঁকা একটা ছবি, প্যারিস ও লন্ডনে প্রদর্শিত হয় |
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানের ডার্টিংটন হল স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন |
- ৭ই মে ১৯৬১ সালে, ভারতীয় ডাকবিভাগ সম্মান জ্ঞাপনের উদেশ্যে; তাঁর ছবি দেওয়া একটা ডাক টিকিট প্রকাশ করে |
Death of Rabindranath Tagore:
জীবনের শেষ কিছু বছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধারাবাহিক ভাবে শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন | রোগ যেন তাঁকে কিছুতেই ছাড়তেই চাইছিলো না | দুবার তো তিনি এমন অসুস্থ হন, যারজন্য তাঁকে বহুদিন বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পরে থাকতে হয় |
জানা যায় ১৯৩৭ সালে কবি একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থার শিকার হন | যদিও তিনি সেইসময় সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ঠিকই কিন্তু ১৯৪০ সালে আবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর সেরে উঠতে পারেননি |
আরো পড়ুন: সুকুমার রায়ের জীবনী
অবশেষে দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তারিখে, জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি | মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮০ বছর |
আশা করি তুমি “Rabindranath Tagore Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+
Rabindranath Tagore Biography in Bengali | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী
July 18, 2020 by maximios • Quotes
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী
Rabindranath Tagore Biography
নাম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/Rabindranath Tagore
জন্ম
৭ই মে ১৮৬১, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা
অভিভাবক
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (বাবা)
সারদাসুন্দরী দেবী (মা)
ছদ্দনাম
ভানুসিংহ
দাম্পত্যসঙ্গী
মৃণালিনী দেবী
পেশা
কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, গল্পকার
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী
গীতাঞ্জলী, রবীন্দ্র রচনাবলী, গোরা, আমার সোনার বাংলা, ঘরে বাইরে প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার
নোবেল পুরস্কার (১৯১৩)
মৃত্যু
৭ই আগস্ট ১৯৪১
মৃত্যুস্থান
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কোলকাতা
বাংলা সাহিত্য জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের সকলের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | তাঁর লেখা অসাধারণ সব কবিতা ও গান, আজও প্রত্যেকটা বাঙালীর সমানভাবে মন কাঁড়ে | তিনি শুধু একজন শ্রেষ্ঠ গল্পকারই ছিলেন না, সেইসাথে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিকও |
Early Life of Rabindranath Tagore:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয় ৭ই মে ১৮৬১ সালে, পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা শহরে অবস্থিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে | তাঁর বাবার নাম ছিলো মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি কিনা ব্রাহ্মসমাজের একজন ধর্মগুরু ছিলেন এবং তাঁর মায়ের ছিলো নাম সারদাসুন্দরী দেবী |
তুমি হয়তো জেনে এটা অবাক হবে যে, রবীন্দ্রনাথ কিন্তু তাঁর বাবা মায়ের ১৪তম সন্তান ছিলেন | তাঁর সকল ভাই ও বোনদের নাম ছিলো যথাক্রমে- দ্বিজেন্দ্রনাথ, গণেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রনাথ, বীরেন্দ্র, সৌদামিনি, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, সুকুমারী, পুনেন্দ্র, শরৎকুমারী, বার্ণকুমারী, সোমেন্দ্র, বুধেন্দ্র ও গগেন্দ্রনাথ|
এরপর ১৮৭৫ সালে যখন রবীন্দ্রনাথের মাত্র চোদ্দ বছর বয়স, তখন তাঁর মায়ের অবশেষে মৃত্যু ঘটে | স্ত্রীয়ের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও বেশি জোড়াসাঁকোর বাড়িতে থাকতেন না | দেশভ্রমণের নেশায়, বছরের অধিকাংশ সময়ই কলকাতার বাইরে তিনি অতিবাহিত করতেন |
এরফলেই ছোট্ট রবীন্দ্রনাথের শৈশব জীবন, ভৃত্যদের অনুশাসনে কেটেছিলো |
Education of Rabindranath Tagore:
ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ কোলকাতার বিভিন্ন স্কুলে কিছুদিনের জন্য পড়াশোনা করেন | যেই স্কুলগুলোর নাম ছিলো যথাক্রমে- ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট |
কিন্তু এতগুলো নামী স্কুলে পড়ার পরেও, তিনি কোনো স্কুলে বেশিদিন টিকতে পারেননি | এর পিছনে অবশ্য প্রধান কারণ ছিলো তাঁর স্কুল শিক্ষার প্রতি অনীহা | জানা যায়, স্কুলের চার দেওয়ালের বদ্ধ পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর এই রীতি তাঁকে মোটেই পড়াশোনা শেখার প্রতি আকৃষ্ট করতো না |
Real Photo of Rabindranath Tagore (Credit- Wikipedia)
এইজন্যই পরে, বাড়ির খোলা পরিবেশে পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো |
তাঁর এই অদ্ভুত আচরণের উদ্ভব হয়, তাঁর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই | শোনা যায়, ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতেও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন | সেইসময় প্রকৃতিই ছিলো যেন তাঁর জীবনের প্রধান আকর্ষণের বিষয় |
আরো পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তিসমূহ
এরপর ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সেখানে ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলেও ভর্তি হন তিনি | তারপর ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন কিন্তু সাহিত্যচর্চার প্রতি আকর্ষণের কারণে তিনি সেই পড়াশোনা আর শেষ করতে পারেননি |
Marriage of Rabindranath Tagore:
ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আশার পর, অবশেষে ১৮৮৩ সালে ৯ই ডিসেম্বর তারিখে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় বেণীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে | বিয়ের সময় ভবতারিণীর পুণরায় নামকরণ করা হয় এবং তাঁর নাম পাল্টে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী |
Rabindranath With Mrinalini Devi (Credit- Wikipedia)
পরবর্তীকালে, মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের মোট পাঁচ সন্তান হয় | তাঁদের নাম যথাক্রমে ছিলো- মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭) |
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথ মারা যায় |
Career of Rabindranath Tagore:
ভারতী পত্রিকায় ১৮৭৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশ করেন | সেগুলো ছিলো ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা আর ভিখারিণী ও করুণা নামে দুটো সুন্দর ছোটগল্প | এগুলোর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায় |
এরপর ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “কবিকাহিনী” | এছাড়াও পরে তিনি রচনা করেছিলেন “সন্ধ্যাসংগীত” নামক আরেকটি কাব্যগ্রন্থ । “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” নামে লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থেরই অন্তর্গত ছিলো ।
এরপর একে একে “সন্ধ্যাসংগীত” কাব্যগ্রন্থ রচনার পর তিনি প্রভাতসংগীত, মানসী (১৮৯০), সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০), নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলী (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪), বলাকা (১৯১৬), শ্যামলী (১৯৩৬) প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন |
রবীন্দ্রনাথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থ হল গীতাঞ্জলী (Song Offerings), যেটার জন্য তিনি সারা বিশ্বে বিশাল জনপ্রিয়তা পান | আর এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন ।
তিনি ছিলেন এমন একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক যাঁর হাতেই বাংলা প্রবন্ধ, রচনা, কবিতা, ছোটগল্পের বিপুল প্রসার ঘটে | তাঁর এইসব সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ধারণা পাওয়া যায় |
তিনি কিন্তু শুধু কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প কিংবা উপন্যাস লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না | বিভিন্ন জীবনীমূলক ও ভ্রমণ কাহিণী লেখাতেও তিনি ছিলেন সমানভাবে পটু | তাঁর বিখ্যাত কিছু আত্মকথামূলক গ্রন্থ হলো – জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩)|
Establishment of Shantiniketan & Vishva Bharti:
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বছর আগে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে, এক বিশাল জমি কেনেন | সেখানে তিনি ১৮৮৮ সালে একটা আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটা ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন |
বাবার সেই কেনা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরী করতে চেয়েছিলেন | তাই প্রথমে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন “পাঠ্য ভবন” নামে একটা স্কুল, যেটা বাকি সব স্কুলের থেকে বেশ আলাদা ছিলো | কারণ সেই স্কুল ছিলো সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নীচে একটা গাছের তলায় |
Mahatma Gandhi With Kaviguru
পরে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি সেই স্কুলকে আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে সেটাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন | যেটার পরবর্তীকালে নাম রাখেন তিনি “বিশ্বভারতী” যা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় |
সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি আবার ১৯২৪ সালে আরেকটি শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন যেটা ছিলো “শিক্ষা সত্র” | তিনি এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন |
World Tour of Rabindranath Tagore:
জীবনাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১২বার বিদেশ ভ্রমণ করেন | তিনি মোট পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে | ১৯২০ থেকে ১৯২১ সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান তিনি । ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান চীন সফরে, তারপর সেখান থেকে জাপানে গিয়ে সেখানে জাতীয়তাবাদ বিরোধী বক্তৃতা দেন |
আরো পড়ুন: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ সহ তাঁর চার সঙ্গীকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে গেছিলেন ১৯২৭ সালে | তারপর তিনি একে একে ভ্রমণ করেন সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইরাক ও পারস্য প্রভৃতি দেশে | ১৯৩৪ সালে শ্রীলঙ্কা যাত্রাই ছিলো কবিগুরুর শেষে বিদেশ যাত্রা |
Interesting Facts About Rabindranath Tagore:
Awards and Achievements of Rabindranath:
Death of Rabindranath Tagore:
জীবনের শেষ কিছু বছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধারাবাহিক ভাবে শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন | রোগ যেন তাঁকে কিছুতেই ছাড়তেই চাইছিলো না | দুবার তো তিনি এমন অসুস্থ হন, যারজন্য তাঁকে বহুদিন বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় পরে থাকতে হয় |
জানা যায় ১৯৩৭ সালে কবি একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থার শিকার হন | যদিও তিনি সেইসময় সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ঠিকই কিন্তু ১৯৪০ সালে আবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর সেরে উঠতে পারেননি |
আরো পড়ুন: সুকুমার রায়ের জীবনী
অবশেষে দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তারিখে, জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি | মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮০ বছর |
আশা করি তুমি “Rabindranath Tagore Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+