Shakti Chattopadhyay Biography in Bengali | শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী
Shakti Chattopadhyay Biography in Bengali
নাম |
শক্তি চট্টোপাধ্যায়/Shakti Chattopadhyay |
জন্ম |
২৫শে নভেম্বর ১৯৩৩, জয়নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ব্রিটিশ ভারত |
অভিভাবক |
বামানাথ চট্টোপাধ্যায় (বাবা) |
দাম্পত্য সঙ্গী |
মীনাক্ষী দেবী |
সন্তান |
তিতি চট্টোপাধ্যায় |
পেশা |
কবি, উপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক |
জাতীয়তা |
ভারতীয় |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার |
আনন্দ পুরস্কার (১৯৭৫) |
মৃত্যু |
২৩শে মার্চ ১৯৯৫, কলকাতা (বয়স ৬১) |
বন্ধু তুমি যদি বাংলা এবং বাংলা সাহিত্যকে ভালোবাসো তাহলে আশা করি তুমি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নাম নিশ্চই শুনেছো| যিনি ছিলেন বাংলার একজন স্বনামধন্য কবি| যাঁর লেখা অনেক কবিতা এবং উপন্যাস আজও অনেক বাঙালী পাঠকদের কাছে খুব প্রিয়| ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক বলে মান্য করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন অন্যতম|
তুমি হয়তো জানোনা, শক্তি চট্টোপাধ্যায় যখন তাঁর সাহিত্য জীবনের শুরু করেন তখন সেইসময় তিনি উপন্যাসটাই বেশি করে লিখতেন, আর একজন উপন্যাসিক হয়েই সাহিত্য জগতে রুজি-রোজগার করতে চেয়েছিলেন| কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর সমস্ত চিন্তা-ভাবনা এবং সত্ত্বাই কবিতা লেখার দিকে ঝুঁকে পড়ে| আর সেই সুবাদে তিনি হয়ে একজন বিশিষ্ট কবি|
Early life of Shakti Chattopadhyay:
সাহিত্যিক শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় দক্ষিন 28 পরগনার অন্তর্গত জয়নগর অঞ্চলে, ২৫শে নভেম্বর ১৯৩৩ সালে| তিনি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন| তাঁর বাবার নাম ছিলো শ্রী বামানাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ছিলো শ্রীমতী কমলা দেবী|
তাঁর বাবা কিন্তু পেশায় একজন ড্রামা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন এবং পড়াতেন কলকাতার দ্য কাশিমবাজার স্কুল অব ড্রামায় আর মা ছিলেন সাধারণ গৃহকর্ত্রী|
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের যখন বয়স মাত্র ৪ বছর, তখন সেইসময় তাঁর বাবা মারা যায়| বাবা মৃত্যুর পর তাঁর দাদু তাদের সংসারের হাল সামলান এবং একজন অভিভাবক রূপে অবতীর্ণ হন|
Education life of Shakti Chattopadhyay:
তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৩০ সালের শেষের দিকে, জয়নগর অঞ্চলের একটা প্রাথমিক স্কুল থেকে| পরে ১৯৪৮ সালে তিনি ও তাঁর পরিবার যখন কোলকাতার বাগবাজারে চলে আসেন, তখন সেই সময় তিনি ভর্তি হন মহারাজা কাশিম বাজার পলিটেকনিক স্কুলে|
সেই স্কুলে এসে তিনি সেখানকার এক শিক্ষকের মাধ্যমে মার্কসবাদ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং মার্কসের আদর্শে ভীষনভাবে অনুপ্রাণিত হন| যার সুবাদে তিনি পরবর্তীকালে যোগ দেন কম্যুনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়াতে (সি.পি.আই)|
এরপর ১৯৫১ সালে তিনি অবশেষে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং সিটি কলেজে কমার্স বিভাগে ভর্তি হন| তারপর ১৯৫৩ সালে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও পাশ করেন| পরবর্তীকালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন বাংলা সাহিত্যে অনার্স করার উদ্দেশ্যে|
Work life of Shakti Chattopadhyay:
সাহিত্যিক শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কবিতা অবশেষে প্রকাশ পায় বুদ্ধদেব বসুর “কবিতা” পত্রিকায়, ১৯৫৬ সালে| তাঁর লেখা সেই কবিতার নাম ছিলো “যম”| ধীরে ধীরে তিনি কৃত্তিবাস সহ অন্যান্য সাহিত্য বিষয়ক পত্র-পত্রিকায়ও লেখালেখি শুরু করেন|
এইসবের সাথে তিনি একটা সাহিত্য কোর্সেও ভর্তি হন যেটা সেইসময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হতো| সেই সাহিত্য কোর্সটায় যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে বুদ্ধদেব বসুই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন| কিন্তু অনাগ্রহের কারণে তিনি সেই কোর্সটা শেষ করতে পারেননি|
আরো পড়ুন: জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবনী
এরপর সাক্সবি ফার্মা লিমিটেডে স্টোরে তিনি একজন সহকারী হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন এবং সেখানে বেশ কিছুকাল ধরে কাজও করেন| তারপর সেই কাজ ছেড়ে তিনি কিছু বছর শিক্ষকতাও করেন ভবানীপুর টিউটোরিয়াল হোমে|
তিনি ব্যবসাও করতে চেয়েছিলেন আর কিছুদিন সেটা করেনও কিন্তু সাফল্য না পেয়ে আর কাজে মন না বসার দরুন বাকি সব কাজের মতোই সেটাও করা তিনি ছেড়ে দেন|
পরে আবার তিনি একটা মোটর কোম্পানিতে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেটাতেও তিনি ঠিক মতো করে মন বসাতে পারেননা| তোমার এটাও জেনে রাখা দরকার যে, তিনি ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেছিলেন|
Other Works of Shakti Chattopadhyay:
আমি লেখার শুরুতেই তোমাকে বলেছিলাম যে, তিনি হাংরি আন্দোলনের জনক ছিলেন| বাংলা সাহিত্যে স্থিতাবস্থা ভাঙার আওয়াজ তুলে ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যশিল্পে এই ধরনের এক আন্দোলন হয়েছিলো সেইসময়|
সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধারা এই চারজন মিলেই হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেন ১৯৬১ সালের নভেম্বর মাসে, বিহারের পাটনা শহর থেকে| কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি সেই আনন্দলের সাথে যুক্ত থাকতে পারেননি, তার একটাই মাত্র প্রধান কারণ আর সেটা হলো মতপার্থক্য|
তিনজনের সাথে লাগাতার মতের অমিল হওয়ার জন্য তিনি সেই আন্দোলন ত্যাগ করেন ১৯৬৩ সালে এবং যোগ দেন কৃত্তিবাস নামক এক সাহিত্য গোষ্ঠীতে|
সেই গোষ্ঠীর অন্যতম একজন সাহিত্যক ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়| যার সাথে পরবর্তীকালে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের গভীর বন্ধুত্ব হয়| আজও শক্তি চট্টোপাধ্যাযয়ের নাম হলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম অবশ্যই ভেসে ওঠে|
তুমি হয়তো শুনলে বিশ্বাস করবে না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এই হাংরি আন্দোলনের একজন ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং এই আন্দোলনকে তিনি নিন্দনীয় বলে মনে করতেন| কিন্তু বন্ধুত্ব হচ্ছে এমনই একটা জিনিস যা এই নিন্দা ও বিরোধীতার থেকে অনেক অনেক উর্ধ্বে| এইজন্যই তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে এই আনন্দলনের জনক হওয়া সত্বেও কোনোদিন খাটো চোখে দেখেননি বরং দুহাত ভরে দিয়েছেন বন্ধুত্বের ভালোবাসা|
Marriage life of Shakti Chattopadhyay:
১৯৬৫ সালে এক আড্ডায় মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের সাথে তার আলাপ ঘটে এবং পরে সেই আলাপ এতটাই নিবিড় হয়ে ওঠে যে পরবর্তীকালে শক্তি চট্টোপাধ্যায় মীনাক্ষী দেবীকে বিয়েই করে ফেলেন| তাঁদের দুজনের একটা কন্যা সন্তান হয়, যার নাম তাঁরা রাখেন তিতি চট্টোপাধ্যায়।
আরো পড়ুন: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবনী
এবার দেখে নেওয়া যাক তাঁর লেখা কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম গুলোকে:
ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো (১৯৬৭), সোনার মাছি খুন করেছি (১৯৬৮); অন্ধকার নক্ষত্রবীথি তুমি অন্ধকার (১৯৬৮); হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান (১৯৬৯); চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৯৭০); পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি (১৯৭১); প্রভু নষ্ট হয়ে যাই (১৯৭২); সুখে আছি (১৯৭৪); ঈশ্বর থাকেন জলে (১৯৭৫); অস্ত্রের গৌরবহীন একা (১৯৭৫); জ্বলন্ত রুমাল (১৯৭৫); ছিন্নবিচ্ছিন্ন (১৯৭৫); সুন্দর এখানে একা নয় (১৯৭৬); কবিতায় তুলো ওড়ে (১৯৭৬), ভাত নেই পাথর রয়েছে (১৯৭৯); আঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল (১৯৮০); প্রচ্ছন্ন স্বদেশ (১৯৮১); যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮৩); কক্সবাজারে সন্ধ্যা (১৯৮৫); সন্ধ্যার সে শান্ত উপহার (১৯৮৬); এই তো মর্মর মুর্তি (১৯৮৭); বিষের মধ্যে সমস্ত শোক (১৯৮৮); আমাকে জাগাও (১৯৮৯); ছবি আঁকে ছিঁড়ে ফ্যালে (১৯৯১); জঙ্গলে বিষাদ আছে (১৯৯৪); বড়োর ছড়া (১৯৯৪); সেরা ছড়া (১৯৯৪); টরে টক্কা (১৯৯৬); কিছু মায়া রয়ে গেল (১৯৯৭); সকলে প্রত্যেকে একা (১৯৯৯) ইত্যাদি
Death of Shakti Chattopadhyay:
অবশেষে ২৩শে মার্চ ১৯৯৫ সালে বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় মৃত্যু বরণ করেন| মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬১ বছর|
আশা করি তুমি “Shakti Chattopadhyay Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+
সাহিত্যিক তারাশঙ্করের জীবনী | Tarasankar Bandyopadhyay Biography
September 27, 2020 by maximios • Quotes
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী
Tarasankar Bandyopadhyay Biography in Bengali
জন্মস্থান
বন্ধু, তুমি যদি গল্পের বই আর উপন্যাস পড়তে ভালোবাসো; তাহলে আশা করি তুমি বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশ্চই চেনো | তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন অন্যতম সেরা সাহিত্যিক তথা ঔপন্যাসিক |
তিনি তাঁর সম্পূর্ণ জীবনকালে প্রায় ৬৫টা উপন্যাস, ৫৩টা ছোটগল্প, ৪টে আত্মজীবনী মূলক গল্প ও দুটো ভ্রমন কাহিনী লিখেছিলেন |
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ২৩শে জুলাই, ১৮৯৮ সালের বর্তমান বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলে হয়েছিলো | তাঁর বাবা ছিলেন হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আর মা ছিলেন প্রভাবতী দেবী |
Tarasankar’s House
ছোটবেলা থেকেই তারাশঙ্কর পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন | তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন গ্রামের একটা প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করেছিলেন | পরে ১৯১৬ সালে, তিনি লাভপুর যাদবলাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উর্ত্তীর্ণ হন | আর তারপরই তিনি ভর্তি হন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, ঠিক একই বছরে |
সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি আবার ভর্তি হন সাউথ সোবার্বান কলেজে, যেটার আজ বর্তমানে নাম আশুতোষ কলেজ |
তুমি হয়তো জানোনা, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তেন, সেইসময় তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন | তখন যেহেতু ভারতে অনেক স্বাধীনতা আন্দোলন হচ্ছিল, তাই একজন আদর্শবাদী দেশপ্রেমীক হওয়ায় তিনিও সেইসব আন্দোলনে একে একে যোগ দিতে থাকেন |
পরে শারীরিক অসুস্থতা ও ক্রমাগত স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে, তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকে সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হন |
শোনা যায়, কলেজে পড়ার সময়ই তিনি একটা যুব আন্দোলনকারী সংঘের সাথে যুক্ত হন এবং তাদের সাথে মিলে তিনি দেশের আইন অমান্য করে অনেক রাজনৈতিক কাজকর্ম করতে শুরু করেন | যারফলে তাঁকে একসময় ব্রিটিশ পুলিশরা গ্রেপ্তারও করেন |
গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে এক বছরের জন্য জেল হেফাজতে রাখা হয় | জেল থেকে বেরিয়ে তিনি কিছু বছর তাঁর গ্রামেই কাটান এবং সেখানেই অনেক ছোটগল্প লেখা শুরু করেন | অবশেষে ১৯৩৯ সালে প্রথমবারের জন্য তাঁর লেখা ছোটগল্প “রসকলি”, বাংলার সেইসময়কার বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা “কল্লোলে” প্রকাশিত হয় |
এবার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৪০ সালে স্থায়ীভাবে কোলকাতায় বসবাস শুরু করেন এবং এখানে এসেই তিনি পুরোপুরি ভাবে নিজের সাহিত্যচর্চায় মন দেন |
আরো পড়ুন: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন পরিচয়
ধীরে ধীরে তাঁর লেখা বিভিন্ন ছোটগল্প, কোলকাতার সব নামী পত্রিকায় স্থান পেতে শুরু করে | তিনি তাঁর পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রায় অনেক ছোটগল্পই পত্রিকায় প্রকাশিত করেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম কিছু হলো – কালিকলম,বঙ্গশ্রী,শনিবারের চিঠি,প্রবাসী,পরিচয় ইত্যাদি |
দেখতে দেখতে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাঙালী পাঠকদের কাছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন | আর তাঁর লেখা প্রত্যেকটা ছোটগল্প ও উপন্যাস, বাঙালী পাঠকদের মন একের পর এক জয় করতে থাকে |
সাহিত্যিক হিসাবে তাঁর জায়গা পাকাপাকি হয়ে যাওয়ার পরও, তিনি কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে তখনও যুক্ত ছিলেন | একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবেও নির্বাচিত হন | এছাড়াও তিনি প্রায় ৮ বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন |
১৯৭০ সালে তাঁকে আবার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি হিসাবেও নির্বাচন করা হয় | সেখানেও তিনি তাঁর দায়িত্ব, একদম সুষ্ঠুভাবে পালন করেন |
তোমার এটা জেনে রাখা দরকার যে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম ছিলো “চৈতালী ঘূর্ণি”; যেটা ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয় | এছাড়াও তাঁর লেখা কিছু বিখ্যাত উপন্যাস হলো – হাসুলী বাঁকের উপকথা, আরোগ্য নিকেতন, রাই কমল, ধাত্রী দেবতা প্রভৃতি |
Photo of Tarasankar Bandyopadhyay
তাঁর লেখা বেশিরভাগ উপন্যাসেরই বিষয়বস্তু ছিলো বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনচিত্র, স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য,বিদ্রোহ, গ্রাম্য অঞ্চলের মাটি ও মানুষ ইত্যাদি নিয়ে |
এইরকমের বিভিন্ন বৈচিত্রময় বিষয়বস্তু থাকার জন্যই হয়তো তাঁর লেখা প্রত্যেকটা উপন্যাস, আজও সকল বাঙালী পাঠকদের কাছে ঠিক ততটাই জনপ্রিয় যেমনটা আগে ছিলো |
তারাশঙ্করের রচনার আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি তাঁর প্রত্যেকটা লেখার মধ্যে মানুষের মহত্ত্বকে পরম যত্নের সঙ্গে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন । সেইজন্যই তো শরৎচন্দ্রের রচিত কথাসাহিত্যের পর, তাঁরই রচিত কথাসাহিত্যই বাঙালী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো |
অনেকে বিশিষ্ট লেখকেরা মনে করেন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন প্রথম একজন লেখক; যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে উপন্যাস লেখার চিরাচরিত রীতিকে ভেঙ্গে ফেলেন এবং একটু অন্য কায়দায় নিজের উপন্যাস গুলো লেখেন |
তাঁর এই অন্যরকম ভাবে উপন্যাস লেখার কায়দা, সেইসময়ের বাঙালী পাঠকদের পুরোপুরি মুগ্ধ করে তোলে |
তারাশঙ্করের লিখিত অনেক রোম্যান্টিক উপন্যাস সেইসময়ের অনেক যুবক-যুবতীদের মনে প্রেমের আলোড়ন সৃষ্টি করে | তাঁর সেইসব উপন্যাস অবশ্য তখনকার অনেক কনজারভেটিভ মানুসিকতা সম্পন্ন মানুষদের ভালো লাগেনি, কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখার মাধ্যমে অনেক বাঙালীদের মনে রোমান্টিকতার ছোঁয়া নিশ্চই লাগাতে পেরেছিলেন |
তিনি তাঁর জীবনকালে, অনেক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন | তা চলো এবার জেনে নেওয়া যাক, তাঁর সেইসব কৃতিত্ব গুলোর সম্বন্ধে:
Honor & Achievements:-
*১৯৫২ সালে তিনি বিধানসভার সদস্য হিসাবে প্রথমবারের জন্য নির্বাচিত হন |
*১৯৫২-১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য হিসাবে ছিলেন |
*১৯৫৫ সালে তিনি “আরোগ্য নিকেতন উপন্যাস” লেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক রবীন্দ্র পুরস্কার পান |
*১৯৫৬ সালে তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হন |
*১৯৫৯ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী গোল্ড মেডেল দ্বারা সম্মানিত হন |
*১৯৬০ সালে তিনি মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত, সর্বভারতীয় লেখক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন |
*১৯৬২ সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন |
*১৯৬০-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন |
*১৯৬৬ সালে তিনি তাঁর উপন্যাস “গনদেবতা” লেখার জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হন |
*১৯৬৯ সালে তিনি পদ্ম ভূষন পুরস্কারেও ভূষিত হন |
অবশেষে এই মহান লেখক তথা ঔপন্যাসিক; ১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে, প্রায় ৭৩ বছর বয়সে তাঁর কোলকাতার বাড়িতে মারা যান এবং তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়, উত্তর কোলকাতার নিমতলা শ্মশান ঘাটে |
আরো পড়ুন: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টিসমূহ
Short Story Collections of Tarasankar Bandyopadhyay:
জলসা ঘর (১৯৩৮)
রসকলি (১৯৩৯)
তিন শূন্য (১৯৪২)
প্রতিধ্বনি (১৯৪৩)
বেদেনী (১৯৪৩)
দিল্লিকা লাড্ডু (১৯৪৩)
জাদুকরী (১৯৪8)
স্থলপদ্ম (১৯৪8)
তেরশো পঞ্চাশ (১৯৪8)
প্রসাদ মালা (১৯৪৫)
হারানো সুর (১৯৪৫)ইমারত (১৯৪৭)
রামধনু (১৯৪৭)
শ্রী পঞ্চমী (১৯৪৮)
কামধেনু (১৯৪৯)
বিস্ফোরণ (১৯৫৫)
কালান্তর (১৯৫৬)
একটি প্রেমের গল্প (১৯৬৫)
কিশোর সঞ্চয়ন (১৯৬৬)
নারী রহস্যময়ী (১৯৬৭)
পঞ্চকন্যা (১৯৬৭)
শিবানীর অদৃষ্ট (১৯৬৭)
গবিন সিংহের ঘর (১৯৬৮)
জয়া (১৯৬৮)
এক পশলা বৃষ্টি (১৯৬৯)
মিছিল (১৯৬৯)
উনিশশো একাত্তর (১৯৭১)
Novel’s of Tarasankar Bandyopadhyay:
পাষানপুরী (১৯৩৩)
নীলকন্ঠ (১৯৩৩)
রাই কমল (১৯৩৫)
প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৩৬)
আগুন (১৯৩৮)
ধাত্রী দেবতা (১৯৩৯)
কালিন্দী (১৯৪০)
গণদেবতা (১৯৪৩)
পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪)
কবি (১৯৪৪)
বিংশ শতাব্দী (১৯৪৫)
সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৬)
নাগিনী কন্যার কাহিনী (১৯৫২)
আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩)
বিপাশা (১৯৫৯)
মহাশ্বেতা (১৯৬১)
মণি বৌদি (১৯৬৯)
ছায়াপথ (১৯৬৯)
কালরাত্রি (১৯৭০)
রূপসী বিহঙ্গিনী (১৯৭০)
অভিনেত্রী (১৯৭০)
ফরিয়াদ (১৯৭০)
শতাব্দীর মৃত্যু (১৯৭০)
Drama’s of Tarasankar Bandyopadhyay:
দুই পুরুষ (১৯৪৩)
পথের ডাক (১৯৪৩)
দ্বীপান্তর (১৯৪৫)
সংঘাত (১৯৬২)
আরোগ্য নিকেতন (১৯৬৮)
Source: Wikipedia
Credit: NH Tv Bangla
আশা করি তুমি “Tarasankar Bandyopadhyay Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+