গৌতম বুদ্ধের জীবনী
Gautam Buddha Biography in Bengali
নাম
|
সিদ্ধার্থ গৌতম/Siddhattha Gautama/Gautam Buddha
|
জন্ম
|
আনুমানিক ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪৮০ অব্দ,লুম্বিনী, নেপাল
|
অভিভাবক
|
শুদ্ধোধন (বাবা)
মায়া দেবী (মা)
|
দাম্পত্য সঙ্গী
|
যশোধারা
|
সন্তান
|
রাহুল
|
ধর্ম
|
বৌদ্ধ
|
অন্যনাম
|
শাক্যমুণি
|
মৃত্যু
|
আনুমানিক ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪০০ অব্দ,কুশীনগর,উত্তর প্রদেশ, ভারত (৮০ বছর)
|
ব্লগটা পড়তে না ভালো লাগলে এই অডিও পডকাস্টটা শোনো..
আমাদের পডকাস্ট চ্যানেলকে Subscribe করো এখানে ক্লিক করো
পৃথিবীতে যদি কোনো শান্তিপ্রিয় ধর্ম বলে কোনো ধর্ম থেকে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই বৌদ্ধ ধর্ম| এই ধর্ম গড়ে ওঠার পিছনে একজন মহান ব্যক্তির বিশাল বড় এক অবদান রয়েছে| যদিও তিনি তাঁর জীবনকালে কোনো ধর্মেরই প্রতিষ্ঠা করেননি কিন্তু তাঁকেই আমরা সবাই সেই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে দেখি|
হ্যাঁ, তুমি ঠিকই ধরেছো; আমি বলছি সিদ্ধার্থ গৌতমের কথা| যাঁকে আমরা প্রত্যেকে গৌতম বুদ্ধ নামে চিনি|
তুমি কি জানো এই ‘বুদ্ধ’ শব্দটার অর্থ কি? যদি তা না জেনে থাকো তাহলে সবার আগে সেটা একটু জেনে নাও, তারপর না হয় তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জানবে| সংস্কৃতে এই ‘বুদ্ধ’ শব্দটার অর্থ হচ্ছে পরম শাশ্বত বোধ বা পরমজ্ঞান লাভ| যে মানুষ এই জীবনে পরমজ্ঞান লাভ করতে পারে তাঁকে ‘বুদ্ধ’ বলা হয়|
তুমিও যদি এই জীবনে পরম শাশ্বত বোধ বা পরমজ্ঞান লাভ করতে কোনোদিন সক্ষম হও তাহলে তুমিও হয়ে যাবে পরবর্তী বুদ্ধ| এটা কোনো Title বা Surname নয়| তাঁর নাম মোটেই প্রথম থেকে গৌতম বুদ্ধ ছিলো না, তাঁর আসল নাম ছিলো সিদ্ধার্থ গৌতম| পরে যখন তিনি পরমজ্ঞান লাভ করেন তারপর থেকেই তিনি পরিণত হন গৌতম বুদ্ধে|
আশা করি তোমায় পরিষ্কার করে বোঝাতে পারলাম এই বিষয়টা|
তুমি আরেকটা বিষয়ও জানলে অবাক হবে যে, পৃথিবীতে তিনি কিন্তু একমাত্র বুদ্ধ ছিলেন| তাঁর আগেও এই পৃথিবীতে অনেক বুদ্ধ জন্ম নিয়েছেন| পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি যেসব বুদ্ধরা ছিলেন, তাঁদের নাম ছিলো যথাক্রমে- তৃষঙ্কর বুদ্ধ, মেধঙ্কর বুদ্ধ, শরণংকর বুদ্ধ, দীপঙ্কর বুদ্ধ, কোন্ডণ্য বুদ্ধ, সুমঙ্গল বুদ্ধ, সুমন বুদ্ধ, রেবত বুদ্ধ, সোভিত বুদ্ধ, অনোমদর্শী বুদ্ধ, পদুম বুদ্ধ, নারদ বুদ্ধ, পদুমুত্তর বুদ্ধ, সুমেধ বুদ্ধ, সুজাত বুদ্ধ, প্রিয়দর্শী বুদ্ধ, অর্থদর্শী বুদ্ধ, ধর্মদর্শী বুদ্ধ, সিদ্ধার্থ বুদ্ধ, তিষ্য বুদ্ধ, ফুসস্ বুদ্ধ, বিপশ্য বুদ্ধ, সিখী বুদ্ধ, বেসাভু বুদ্ধ, কুকুসন্ধ বুদ্ধ, কোণাগমন বুদ্ধ, কশ্যপ বুদ্ধ|
তাঁদের প্রত্যেকের সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে হলে এখানে ক্লিক করে তা জেনে নিতে পারো|
এবার তবে জানা যাক গৌতম বুদ্ধের সম্পর্কে|
Early life of Gautama Buddha:
ইতিহাস ঘাটলে গৌতম বুদ্ধের জন্ম সম্পর্কে একদম নির্ভুল তথ্য মোটেই পাওয়া যায়না| যতটুকু জানা যায় তাঁর বেশিরভাগটাই লোক কথার অন্তর্গত| কিন্তু তবুও সিংহলী ইতিবৃত্ত, ললিত বিস্তার, জাতক ও অশ্ব ঘোষের লেখা বুদ্ধ চরিত প্রভৃতি গ্রন্থ ঐতিহাসিকবীদদের এক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করেছে|
সেইসব পড়লে জানা যায় গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয় তৎকালীন অখন্ড ভারতবর্ষে অবস্থিত লুম্বিনীর জেলার কপিলাবস্তুতে নগরে, আনুমানিক ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪৮০ অব্দে|(বর্তমানে লুম্বিনি আজ নেপালের অন্তর্গত)
সেখানে আরো লেখা আছে যে তিনি নাকি শাক্য রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন| তাঁর বাবার নাম ছিলো শুদ্ধোধন এবং মায়ের নাম ছিলো মায়া দেবী| শাক্যমত অনুসারে এটাও বলা হয় যে, মায়া দেবী গর্ভাবস্থা থাকাকালীন যখন শশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন তখন নাকি তিনি তরাই অঞ্চলেরে অন্তর্গত লুম্বিনী গ্রামে এক শালগাছের তলায় সিদ্ধার্থের জন্ম দেন কিন্তু সিদ্ধার্থের জন্মের মাত্র সাতদিনের মধ্যেই তিনি মারা যান|
এরপর থেকে ছোট্ট সিদ্ধার্থ তাঁর মাসি গৌতমীর কাছে লালিত পালিত হন| অনেকে মনে করেন তাঁর নামের “গৌতম” অংশটি তাঁর মাসির নাম থেকেই এসেছে| কিন্তু এই কথাটা কতটা সত্য, সেই বিষয়ে কারোর এখনো অবধি জানা নেই|
যাই হোক, গৌতমের জন্মের পর রাজা শুদ্ধোধন অনেক প্রসিদ্ধ সন্ন্যাসী এবং গনৎকারদের আমন্ত্রণ করেন| কিন্তু প্রত্যেকেই সেই ছোট্ট শিশুকে দেখে এটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে তার সেই শিশু একদিন সন্ন্যাসী হয়ে ধর্মের প্রচার করবেন এবং একজন গুনী সিদ্ধপুরুষে পরিণত হবেন|
এই কথা শোনার পর রাজা শুদ্ধোধন অনেক চেষ্টা করেছিলেন সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে আটকাবার তাইতো তিনি তাঁর ছেলেকে সংসারে মন বসানোর উদ্দেশ্যে মাত্র ষোলো বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন যশোধারা নামের এক রাজকুমারীর সাথে| তাঁদের একটা ছেলেও হয় এবং সেই ছেলের তাঁরা নাম রাখেন রাহুল|
আরো পড়ুন: গৌতম বুদ্ধের বাণী
কিন্তু হাজার সাংসারিক করার চেষ্টা করলেও, হাজারও বিলাসীতার মধ্যে তাঁকে রেখে দিলেও রাজা শুদ্ধোধন সেই গনৎকারদের বলে যাওয়া ভবিষ্যদ্বাণীকে ঘটতে একদমই আটকাতে পারেননি|
অবশেষে যখন গৌতমের প্রায় উনত্রিশ বছর বয়স, তখন তিনি আর নিজেকে এই সাংসারিক মায়াজালের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে না পেরে, সেইসমস্ত কিছুকে ত্যাগ করে আত্মজ্ঞানের উদ্দেশ্যে রাজমহল ত্যাগ করে চলে যান| বৌদ্ধ ধর্মানুসারে এই ঘটনাকে বলা হয় “মহানিস্ক্রমন”|
Ascetic life and Awakening of Gautama Buddha:
কথিত আছে রাজমহল ত্যাগ করার পর সিদ্ধার্থ গৌতম সর্বপ্রথম আলার কালাম নামে এক যোগগুরুর কাছে যোগ শিক্ষা গ্রহণ করেন| কিন্তু যোগশিক্ষা গ্রহন করার পরে তখনও তিনি তাঁর মনের সেই অজানা প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পাননা|
তাই তিনি এরপর সেইস্থান ত্যাগ করে অপর আরেকজন যোগীর কাছে যান যাঁর নাম ছিলো উদ্দক রামপুত্র| কিন্তু এবারও তাঁর হাতে লাগে সেই হতাশা| আবারও তিনি তাঁর সেই অজানা প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পাননা|
এরপর তিনি জানতে পারেন যে, শরীরকে অপরিসীম কষ্ট দিয়ে কঠোর তপস্যার মাধ্যমে নাকি মুক্তিলাভ হয়| তাই তিনি আর সময় নষ্ট না করে, তাঁর সাথে থাকা অন্য পাঁচজন তপস্বীকে নিয়ে প্রায় ছয় বছর কঠোর তপস্যায় লীন হন| শরীরকে এই ছয় বছরে তিনি ভীষন কষ্ট দেন| অনশন থেকে শুরু করে, শারীরিক নিপীড়ন কোনোটাই বাদ যায়না|
এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে শরীরকে লাগাতার সীমাহীন কষ্ট দিয়ে তপস্যা করার পর তবুও তিনি বোধিলাভ করতে পারেন না| মরনাপন্ন পরিস্থিতি উপস্থিত হওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন যে এই পন্থা মোটেই সঠিক এবং উচ্চমানের নয়| এতে শরীর ও মন এই দুইয়েরই ক্ষতি হয়|
ধর্মচক্রপ্রবর্তন সূত্রানুসারে বলা হয়েছে, তিনি এই ঘটনার পর নিজের মনে এটা উপলব্ধি করেন, অসংযত বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং কঠোর তপস্যার মধ্যবর্তী একটা পথের সন্ধান করে বোধিলাভ হওয়া সম্ভব|
তাই তিনি আর সময় নষ্ট না করে এরপর থেকে আবার ঠিকমতো খাদ্য গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন ও সুজাতা নাম্নী নামে এক স্থানীয় গ্রাম্য মেয়ের কাছ থেকে একবাটি পরমান্ন আহার করেন।
যেটা দেখে অবশ্য তাঁর বাকি পাঁচজন সঙ্গী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যান|
অবশেষে সেই ঘটনার পর তিনি এবার নদীতে স্নান করতে যান ও তা সম্পন্ন করে পুনরায় ধ্যানে বসেন একটা অশ্বত্থ গাছের তলায় এবং প্রতিজ্ঞা করেন সত্যলাভ না হওয়া পর্যন্ত সেইস্থান স্থানত্যাগ না করার| এইভাবে উনপঞ্চাশ দিন একটানা ধ্যান করার পর তিনি শেষমেষ বোধিলাভ করতে সক্ষম হন|
বোধিলাভের পর তিনি জীবনের দুঃখ ও তার কারণ এবং সেইসাথে সেটার প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন|
Evangelism by Gautama Buddha:
বোধিজ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ এবার তাঁর সেই জ্ঞানকে প্রসার ও মানুষের দুঃখ নিবারণের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন| যাত্রাপথে তাঁর সাথে তপুস্স ও ভল্লিক নামে দুজন ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎ হয়| বলা হয় এরাই নাকি তাঁর প্রথম দুই সাধারণ শিষ্য ছিলেন|
অবশেষে পথ চলতে চলতে তিনি এরপর পৌছান বারানসীতে| সেখানে গিয়ে তিনি সাক্ষাত করেন তাঁর সেই পাঁচজন প্রাক্তন সঙ্গীদের সাথে, যারা তাঁকে একসময় ছেড়ে চলে গেছিলেন| তাদেরকেই নাকি তিনি সর্বপ্রথম বোধিজ্ঞান লাভের পর শিক্ষা প্রদান করেন, যা বৌদ্ধ ঐতিহ্যে ধর্মচক্রপ্রবর্তন নামেও খ্যাত| প্রতি বছর আটমাস তিনি বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচার করতেন ও বাকি চার মাস গৃহী শিষ্যদের বাড়িতে কাটাতেন
ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে লোকসমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে| অনেক মানুষ তাঁর শরণাপন্ন হয়ে জীবনে আশার আলো খুঁজে পান| এরমধ্যে অনেকেই আবার তাঁর শিষ্যত্বও গ্রহণ করেন|
সেইসময়কার বড় বড় সম্রাট থেকে শুরু করে সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষ পর্যন্ত প্রত্যেকেই তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান লাভের জন্য মুখিয়ে থাকতেন| বুদ্ধ কিন্তু কোনোদিনই কাউকে তাঁর জ্ঞানের থেকে বঞ্চিত করেননি| সবাইকেই সমান মনে করে সেইসব দান করে গেছেন একদম প্রাণভরে|
আরো পড়ুন: বুদ্ধের ৯ উপদেশ
এরপর দেখতে দেখতে বুদ্ধের শিষ্যের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে| বুদ্ধের দশজন প্রধান শিষ্য হয়ে ওঠেন যথাক্রমে- মহাকশ্যপ, সারিপুত্র, মৌদ্গল্যায়ন, আনন্দ, অনুরুদ্ধ, রাহুল, উপলি, মহাকাত্যায়ন, পুণ্ণ ও সুভূতি|
Nirvana of Gautama Buddha:
জ্ঞানলাভ ও সেটার প্রসারের উদ্দেশ্যে সারাজীবন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর গৌতম বুদ্ধ অবশেষে প্রায় আশি বছর বয়সে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে দেহত্যাগ করেন| সালটা ছিলো আনুমানিক ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪০০ অব্দ| দেহত্যাগের আগে তাঁর শিষ্যদের প্রতি তাঁর অন্তিম উপদেশ ছিলো “বয়ধম্মা সঙ্খারা অপ্পমাদেন সম্পাদেথা” অর্থ্যাৎ “সকল জাগতিক বস্তুর বিনাশ আছে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করো।”
আশা করি তুমি “Gautam Buddha Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+
গৌতম বুদ্ধের জীবনী | Gautam Buddha Biography in Bengali
September 21, 2022 by maximios • Quotes
গৌতম বুদ্ধের জীবনী
Gautam Buddha Biography in Bengali
নাম
সিদ্ধার্থ গৌতম/Siddhattha Gautama/Gautam Buddha
জন্ম
আনুমানিক ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪৮০ অব্দ,লুম্বিনী, নেপাল
অভিভাবক
শুদ্ধোধন (বাবা)
মায়া দেবী (মা)
দাম্পত্য সঙ্গী
যশোধারা
সন্তান
রাহুল
ধর্ম
বৌদ্ধ
অন্যনাম
শাক্যমুণি
মৃত্যু
আনুমানিক ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪০০ অব্দ,কুশীনগর,উত্তর প্রদেশ, ভারত (৮০ বছর)
ব্লগটা পড়তে না ভালো লাগলে এই অডিও পডকাস্টটা শোনো..
আমাদের পডকাস্ট চ্যানেলকে Subscribe করো এখানে ক্লিক করো
পৃথিবীতে যদি কোনো শান্তিপ্রিয় ধর্ম বলে কোনো ধর্ম থেকে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই বৌদ্ধ ধর্ম| এই ধর্ম গড়ে ওঠার পিছনে একজন মহান ব্যক্তির বিশাল বড় এক অবদান রয়েছে| যদিও তিনি তাঁর জীবনকালে কোনো ধর্মেরই প্রতিষ্ঠা করেননি কিন্তু তাঁকেই আমরা সবাই সেই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে দেখি|
হ্যাঁ, তুমি ঠিকই ধরেছো; আমি বলছি সিদ্ধার্থ গৌতমের কথা| যাঁকে আমরা প্রত্যেকে গৌতম বুদ্ধ নামে চিনি|
তুমি কি জানো এই ‘বুদ্ধ’ শব্দটার অর্থ কি? যদি তা না জেনে থাকো তাহলে সবার আগে সেটা একটু জেনে নাও, তারপর না হয় তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জানবে| সংস্কৃতে এই ‘বুদ্ধ’ শব্দটার অর্থ হচ্ছে পরম শাশ্বত বোধ বা পরমজ্ঞান লাভ| যে মানুষ এই জীবনে পরমজ্ঞান লাভ করতে পারে তাঁকে ‘বুদ্ধ’ বলা হয়|
তুমিও যদি এই জীবনে পরম শাশ্বত বোধ বা পরমজ্ঞান লাভ করতে কোনোদিন সক্ষম হও তাহলে তুমিও হয়ে যাবে পরবর্তী বুদ্ধ| এটা কোনো Title বা Surname নয়| তাঁর নাম মোটেই প্রথম থেকে গৌতম বুদ্ধ ছিলো না, তাঁর আসল নাম ছিলো সিদ্ধার্থ গৌতম| পরে যখন তিনি পরমজ্ঞান লাভ করেন তারপর থেকেই তিনি পরিণত হন গৌতম বুদ্ধে|
আশা করি তোমায় পরিষ্কার করে বোঝাতে পারলাম এই বিষয়টা|
তুমি আরেকটা বিষয়ও জানলে অবাক হবে যে, পৃথিবীতে তিনি কিন্তু একমাত্র বুদ্ধ ছিলেন| তাঁর আগেও এই পৃথিবীতে অনেক বুদ্ধ জন্ম নিয়েছেন| পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি যেসব বুদ্ধরা ছিলেন, তাঁদের নাম ছিলো যথাক্রমে- তৃষঙ্কর বুদ্ধ, মেধঙ্কর বুদ্ধ, শরণংকর বুদ্ধ, দীপঙ্কর বুদ্ধ, কোন্ডণ্য বুদ্ধ, সুমঙ্গল বুদ্ধ, সুমন বুদ্ধ, রেবত বুদ্ধ, সোভিত বুদ্ধ, অনোমদর্শী বুদ্ধ, পদুম বুদ্ধ, নারদ বুদ্ধ, পদুমুত্তর বুদ্ধ, সুমেধ বুদ্ধ, সুজাত বুদ্ধ, প্রিয়দর্শী বুদ্ধ, অর্থদর্শী বুদ্ধ, ধর্মদর্শী বুদ্ধ, সিদ্ধার্থ বুদ্ধ, তিষ্য বুদ্ধ, ফুসস্ বুদ্ধ, বিপশ্য বুদ্ধ, সিখী বুদ্ধ, বেসাভু বুদ্ধ, কুকুসন্ধ বুদ্ধ, কোণাগমন বুদ্ধ, কশ্যপ বুদ্ধ|
তাঁদের প্রত্যেকের সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে হলে এখানে ক্লিক করে তা জেনে নিতে পারো|
এবার তবে জানা যাক গৌতম বুদ্ধের সম্পর্কে|
Early life of Gautama Buddha:
ইতিহাস ঘাটলে গৌতম বুদ্ধের জন্ম সম্পর্কে একদম নির্ভুল তথ্য মোটেই পাওয়া যায়না| যতটুকু জানা যায় তাঁর বেশিরভাগটাই লোক কথার অন্তর্গত| কিন্তু তবুও সিংহলী ইতিবৃত্ত, ললিত বিস্তার, জাতক ও অশ্ব ঘোষের লেখা বুদ্ধ চরিত প্রভৃতি গ্রন্থ ঐতিহাসিকবীদদের এক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করেছে|
সেইসব পড়লে জানা যায় গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয় তৎকালীন অখন্ড ভারতবর্ষে অবস্থিত লুম্বিনীর জেলার কপিলাবস্তুতে নগরে, আনুমানিক ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪৮০ অব্দে|(বর্তমানে লুম্বিনি আজ নেপালের অন্তর্গত)
সেখানে আরো লেখা আছে যে তিনি নাকি শাক্য রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন| তাঁর বাবার নাম ছিলো শুদ্ধোধন এবং মায়ের নাম ছিলো মায়া দেবী| শাক্যমত অনুসারে এটাও বলা হয় যে, মায়া দেবী গর্ভাবস্থা থাকাকালীন যখন শশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন তখন নাকি তিনি তরাই অঞ্চলেরে অন্তর্গত লুম্বিনী গ্রামে এক শালগাছের তলায় সিদ্ধার্থের জন্ম দেন কিন্তু সিদ্ধার্থের জন্মের মাত্র সাতদিনের মধ্যেই তিনি মারা যান|
এরপর থেকে ছোট্ট সিদ্ধার্থ তাঁর মাসি গৌতমীর কাছে লালিত পালিত হন| অনেকে মনে করেন তাঁর নামের “গৌতম” অংশটি তাঁর মাসির নাম থেকেই এসেছে| কিন্তু এই কথাটা কতটা সত্য, সেই বিষয়ে কারোর এখনো অবধি জানা নেই|
যাই হোক, গৌতমের জন্মের পর রাজা শুদ্ধোধন অনেক প্রসিদ্ধ সন্ন্যাসী এবং গনৎকারদের আমন্ত্রণ করেন| কিন্তু প্রত্যেকেই সেই ছোট্ট শিশুকে দেখে এটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে তার সেই শিশু একদিন সন্ন্যাসী হয়ে ধর্মের প্রচার করবেন এবং একজন গুনী সিদ্ধপুরুষে পরিণত হবেন|
এই কথা শোনার পর রাজা শুদ্ধোধন অনেক চেষ্টা করেছিলেন সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে আটকাবার তাইতো তিনি তাঁর ছেলেকে সংসারে মন বসানোর উদ্দেশ্যে মাত্র ষোলো বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন যশোধারা নামের এক রাজকুমারীর সাথে| তাঁদের একটা ছেলেও হয় এবং সেই ছেলের তাঁরা নাম রাখেন রাহুল|
আরো পড়ুন: গৌতম বুদ্ধের বাণী
কিন্তু হাজার সাংসারিক করার চেষ্টা করলেও, হাজারও বিলাসীতার মধ্যে তাঁকে রেখে দিলেও রাজা শুদ্ধোধন সেই গনৎকারদের বলে যাওয়া ভবিষ্যদ্বাণীকে ঘটতে একদমই আটকাতে পারেননি|
অবশেষে যখন গৌতমের প্রায় উনত্রিশ বছর বয়স, তখন তিনি আর নিজেকে এই সাংসারিক মায়াজালের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে না পেরে, সেইসমস্ত কিছুকে ত্যাগ করে আত্মজ্ঞানের উদ্দেশ্যে রাজমহল ত্যাগ করে চলে যান| বৌদ্ধ ধর্মানুসারে এই ঘটনাকে বলা হয় “মহানিস্ক্রমন”|
Ascetic life and Awakening of Gautama Buddha:
কথিত আছে রাজমহল ত্যাগ করার পর সিদ্ধার্থ গৌতম সর্বপ্রথম আলার কালাম নামে এক যোগগুরুর কাছে যোগ শিক্ষা গ্রহণ করেন| কিন্তু যোগশিক্ষা গ্রহন করার পরে তখনও তিনি তাঁর মনের সেই অজানা প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পাননা|
তাই তিনি এরপর সেইস্থান ত্যাগ করে অপর আরেকজন যোগীর কাছে যান যাঁর নাম ছিলো উদ্দক রামপুত্র| কিন্তু এবারও তাঁর হাতে লাগে সেই হতাশা| আবারও তিনি তাঁর সেই অজানা প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পাননা|
এরপর তিনি জানতে পারেন যে, শরীরকে অপরিসীম কষ্ট দিয়ে কঠোর তপস্যার মাধ্যমে নাকি মুক্তিলাভ হয়| তাই তিনি আর সময় নষ্ট না করে, তাঁর সাথে থাকা অন্য পাঁচজন তপস্বীকে নিয়ে প্রায় ছয় বছর কঠোর তপস্যায় লীন হন| শরীরকে এই ছয় বছরে তিনি ভীষন কষ্ট দেন| অনশন থেকে শুরু করে, শারীরিক নিপীড়ন কোনোটাই বাদ যায়না|
এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে শরীরকে লাগাতার সীমাহীন কষ্ট দিয়ে তপস্যা করার পর তবুও তিনি বোধিলাভ করতে পারেন না| মরনাপন্ন পরিস্থিতি উপস্থিত হওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন যে এই পন্থা মোটেই সঠিক এবং উচ্চমানের নয়| এতে শরীর ও মন এই দুইয়েরই ক্ষতি হয়|
ধর্মচক্রপ্রবর্তন সূত্রানুসারে বলা হয়েছে, তিনি এই ঘটনার পর নিজের মনে এটা উপলব্ধি করেন, অসংযত বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং কঠোর তপস্যার মধ্যবর্তী একটা পথের সন্ধান করে বোধিলাভ হওয়া সম্ভব|
তাই তিনি আর সময় নষ্ট না করে এরপর থেকে আবার ঠিকমতো খাদ্য গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন ও সুজাতা নাম্নী নামে এক স্থানীয় গ্রাম্য মেয়ের কাছ থেকে একবাটি পরমান্ন আহার করেন।
যেটা দেখে অবশ্য তাঁর বাকি পাঁচজন সঙ্গী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যান|
অবশেষে সেই ঘটনার পর তিনি এবার নদীতে স্নান করতে যান ও তা সম্পন্ন করে পুনরায় ধ্যানে বসেন একটা অশ্বত্থ গাছের তলায় এবং প্রতিজ্ঞা করেন সত্যলাভ না হওয়া পর্যন্ত সেইস্থান স্থানত্যাগ না করার| এইভাবে উনপঞ্চাশ দিন একটানা ধ্যান করার পর তিনি শেষমেষ বোধিলাভ করতে সক্ষম হন|
বোধিলাভের পর তিনি জীবনের দুঃখ ও তার কারণ এবং সেইসাথে সেটার প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন|
Evangelism by Gautama Buddha:
বোধিজ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ এবার তাঁর সেই জ্ঞানকে প্রসার ও মানুষের দুঃখ নিবারণের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন| যাত্রাপথে তাঁর সাথে তপুস্স ও ভল্লিক নামে দুজন ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎ হয়| বলা হয় এরাই নাকি তাঁর প্রথম দুই সাধারণ শিষ্য ছিলেন|
অবশেষে পথ চলতে চলতে তিনি এরপর পৌছান বারানসীতে| সেখানে গিয়ে তিনি সাক্ষাত করেন তাঁর সেই পাঁচজন প্রাক্তন সঙ্গীদের সাথে, যারা তাঁকে একসময় ছেড়ে চলে গেছিলেন| তাদেরকেই নাকি তিনি সর্বপ্রথম বোধিজ্ঞান লাভের পর শিক্ষা প্রদান করেন, যা বৌদ্ধ ঐতিহ্যে ধর্মচক্রপ্রবর্তন নামেও খ্যাত| প্রতি বছর আটমাস তিনি বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচার করতেন ও বাকি চার মাস গৃহী শিষ্যদের বাড়িতে কাটাতেন
ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে লোকসমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে| অনেক মানুষ তাঁর শরণাপন্ন হয়ে জীবনে আশার আলো খুঁজে পান| এরমধ্যে অনেকেই আবার তাঁর শিষ্যত্বও গ্রহণ করেন|
সেইসময়কার বড় বড় সম্রাট থেকে শুরু করে সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষ পর্যন্ত প্রত্যেকেই তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান লাভের জন্য মুখিয়ে থাকতেন| বুদ্ধ কিন্তু কোনোদিনই কাউকে তাঁর জ্ঞানের থেকে বঞ্চিত করেননি| সবাইকেই সমান মনে করে সেইসব দান করে গেছেন একদম প্রাণভরে|
আরো পড়ুন: বুদ্ধের ৯ উপদেশ
এরপর দেখতে দেখতে বুদ্ধের শিষ্যের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে| বুদ্ধের দশজন প্রধান শিষ্য হয়ে ওঠেন যথাক্রমে- মহাকশ্যপ, সারিপুত্র, মৌদ্গল্যায়ন, আনন্দ, অনুরুদ্ধ, রাহুল, উপলি, মহাকাত্যায়ন, পুণ্ণ ও সুভূতি|
Nirvana of Gautama Buddha:
জ্ঞানলাভ ও সেটার প্রসারের উদ্দেশ্যে সারাজীবন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর গৌতম বুদ্ধ অবশেষে প্রায় আশি বছর বয়সে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে দেহত্যাগ করেন| সালটা ছিলো আনুমানিক ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব অথবা ৪০০ অব্দ| দেহত্যাগের আগে তাঁর শিষ্যদের প্রতি তাঁর অন্তিম উপদেশ ছিলো “বয়ধম্মা সঙ্খারা অপ্পমাদেন সম্পাদেথা” অর্থ্যাৎ “সকল জাগতিক বস্তুর বিনাশ আছে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করো।”
আশা করি তুমি “Gautam Buddha Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+