ক্যারিমিনাটির সংক্ষিপ্ত জীবনী | Biography of CarryMinati in Bengali
নাম | অজয় নাগাড় / Ajey Nagar |
ছদ্দনাম | CarryMinati |
অভিভাবক | বিবেক নাগাড় (বাবা) *মায়ের নাম জানা নেই |
বড় দাদা | ইয়াশ নাগাড় |
জন্ম | ১২ই জুন ১৯৯৯, হারিয়ানা, ফরিদাবাদ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
কর্ম | ইউটিউবার (২০১৪-এখনো) |
শিক্ষাগ্রহন | দিল্লি পাবলিক স্কুল,ফরিদাবাদ |
ক্যারিমিনাটির সংক্ষিপ্ত জীবনী
Biography of CarryMinati in Bengali
CarryMinati ওরফে অজয় নাগাড় আজ ভারতবর্ষের এক অতি পরিচিত নাম। তিনি বর্তমানে ভারতের সব সফল ইউটিউবারদের মধ্যে একজন। তিনি হচ্ছেন ভারতের এমন একজন ইউটিউবার যিনি কিনা সর্বপ্রথমবারের জন্য ভারতে, ভিডিওর মাধ্যমে কাউকে রোস্টিং করার কালচারকে তুলে ধরেছিলেন দর্শকদের মাঝে। এর আগে পর্যন্ত ভারতবর্ষে এইরকম ধরনের ভিডিও কনটেন্টের বিশেষ চল ছিলোনা।
আজকে তার এই সফলতার পিছনে তার অনেক বড় ব্যর্থতাগুলোও লুকিয়ে আছে।
তুমি এটা মোটেও ভেবো না যে, Carry এক চান্সে আজ সফলতার শীর্ষে উঠে গেছেন। তা কিন্তু মোটেই নয়। অনেকবারই তাকে ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়।
Early Life of CarryMinati:
অজয় নাগাড়ের জন্ম হয় ১২ই জুন ১৯৯৯ সালে, হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলায়। তার বাবার নাম হল বিবেক নাগাড় এবং বড় ভাইয়ের নাম হল ইয়াশ নাগাড়। তার বড় ভাই ইয়াশ একজন মিউজিক প্রডিউসার। তারও একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে, যেটার নাম Wily Frenzy.
CarryMinati With His Family
অজয়ের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় দিল্লি পাবলিক স্কুল থেকে। এতো ভালো স্কুলে পরেও তিনি পড়াশোনায় তার তেমন কোনো ইন্টারেস্ট আনতে পারেননি। তিনি সেই ছোট বয়স থেকে সর্বদাই কিছু নতুন করার জন্য মরিয়া হয়ে থাকতেন।
চিরাচরিত পদ্ধতিতে নিজের জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে তার মন যেন কিছুতেই চাইতো না।
Career of CarryMinati:
মাত্র ১০-১১ বছর বয়সে তিনি একটা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে ফেলেন সাধারন ঝোঁকের বশেই। সেখানে তিনি এরপর নানা ধরনের ভিডিও আপলোড করা শুরু করেন। কখনো তিনি সেখানে গেমিং ভিডিও আপলোড করতেন আবার কখনো ফুটবল ট্রিকস ভিডিও। চেষ্টা তিনি মোটেই ছাড়তেন না সেই চ্যানেলকে গ্রো করার। আর সত্যি কথা বলতে এইকাজে তার মনও লাগতো পড়াশোনার অপেক্ষা অনেক বেশি।
তার প্রথম সেই চ্যানেলটার নাম ছিলো StealthFearzz, যেটা খুব ভালো একটা রেসপন্স পায়নি দর্শকদের কাছে। সেই সময় তার ভিডিওতে ৫০০ ভিউজও খুব কষ্ট করে আসতো। এর পিছনে তার অবশ্য একটা কারণ ছিলো। ২০১৩-১৪ সালে সবার কাছে ইন্টারনেট আজকের মতো এতো মুড়ি-মুড়কির বিষয় ছিলোনা।
Carryminati’s First Ever Channel on YouTube
তখনকার দিনের মানুষ একটা পাতি গান ডাইনলোড করার ক্ষেত্রেও ১০-১২ বার ভাবতো, ইউটিউব ভিডিও তো অনেক দূরের কথা। তাই আমার মতে সেইজন্যই হয়তো অজয় সেইসময় তার চ্যানেলে এতো ভিউজ পায়নি।
এরপর তিনি ১৫ বছর বয়সে আরেকটা ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। যেটার নাম তিনি রাখেন Addicted A1. এই চ্যানেলটাতেও তিনি গেমিং ভিডিও আপলোড করতেন কিন্তু সেইসাথে আরেকটা জিনিসও তিনি করতেন সেটা হলো গেমিং কমেন্ট্রি।
তিনি ভিডিও গেমস খেলতে খেলতে সানি দেওল এবং ঋত্বিক রোশনের মতো বিখ্যাত বলিউড স্টারদের মিমিক্রি করতেন। দুই বছর কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি সেই চ্যানেলে ১৫০ এর উপর ভিডিও আপলোড করে ফেলেন আর চ্যানেলও সেইসাথে ভালোই গ্রো হওয়া শুরু হয়ে যায়।
তিনি এইসময় একটা জিনিস লক্ষ্য করলেন, যেইসব মানুষ তার ভিডিও দেখতে আসতো তারা কেউই তার গেমের উপর ইন্টারেস্টেড ছিলো না যতটানা ছিল তার হাস্যকর কমেন্ট্রির উপর।
সেই জিনিসটাকে ধরতে পেরে এরপর অজয় সঙ্গে সঙ্গে নিজের চ্যানেলের নাম চেঞ্জ করে রেখে দেন CarryDeol. তিনি বিদেশি একটা চ্যানেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এরপর গেমিং কমেন্ট্রির সাথে সাথে অন্যান্য ছোটখাটো চ্যানেলের ভিডিও উপর রোস্টিং করাও শুরু করেন।
আরও পড়ুনঃ ইরফান খানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ভারতে যেহেতু এমন কনটেন্ট আগে কখনো মানুষ দেখেনি তাই তার কনটেন্ট লোকপ্রিয় হতে বেশি সময় নিলো না। কিছুদিনের মধ্যেই আগুনের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো তার ভিডিও দর্শকদের মাঝে।
কিন্তু তুমি কি জানো অজয়ের একটা স্পেশাল ভিডিওর জন্যই তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হতে বাধ্য হয়। সেই ভিডিওটা যার উপর ছিলো সেও একজন ভারতেরও জনপ্রিও ইউটিউবার।
আমার মনে হয় তুমি এতক্ষনে ধরতে পেরেছো, আমি কার কথা বলছি। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো, bb ki vines ওরফে ভুবন বামই হচ্ছে সেই ব্যাক্তি ছিলো যাকে একটু ভয়ঙ্কর রোস্ট করে অজয়ের চ্যানেল একটা নতুন দিশা পায়।
যদিও সেই কাজের জন্য তাকে অনেক আক্রোশের সম্মুখীন হতে হয় ভুবনের ফ্যানদের কাছে। কিন্তু তাতে তার তেমন কোনো ক্ষতি হয়না বরং তার এতদিনের পরিশ্রম এবং কাজের প্রতি ডেডিকেশন অবশেষে সফলতা পায়। তারপর থেকে সত্যি বলতে তাকে আর পিছনে ফিরে মোটেই তাকাতে হয়না আজ অবধি।
অবশেষে শেষবারে জন্য অজয় তার নিজের চ্যানেলের নাম পরিবর্তন করে ফেলেন এবং রেখে দেন আজকের সময়ের সবচেয়ে চর্চিত নাম CarryMinati.
এরপর Carry অবশেষে নিজের স্কুল ছেড়ে দেন। পড়াশোনার দিকে তিনি আর এগোতে চাননি। একটা ওপেন স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে তিনি নিজের এরপর ১২ ক্লাস কমপ্লিট করেন।
এইসবের পিছনে সবচেয়ে বড় কথা হলো কি জানো, তার বাবা মায়ের সাপোর্ট। সেটা যদি তিনি না পেতেন তাহলে তিনি এইসব কিচ্ছু করতে পারতেন না। ভাগ্যক্রমে তিনি তার বাবা মায়ের সাপোর্ট পেয়েছিলেন বলেই তিনি নির্ভয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন।
সবার ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আজও অনেকের মধ্যে হাজারো প্রতিভা থাকলেও বাবা মায়ের সাপোর্ট না পাওয়ার জন্য অনেকেরই সব কিছুই ছেড়ে দিতে হয়।
তুমি যদি বাবা মা হয়ে থাকো আর যদি আমার লেখা এখন পড়ে থাকো, তাহলে তোমাকে আমি অনুরোধ করছি নিজের ছেলে-মেয়ে কি হতে চায় তা একবারের জন্য হলেও শোনো আর তাদের সাপোর্ট করে দেখো।
সবসময় নিজের ইচ্ছাকে তাদের উপর জোড় করে চাপিয়ে দিওনা। এটা খারাপ জিনিস।
দিনের শেষে একটাই কথা, শুনতে হয়তো তোমার খারাপ লাগবে, কিন্তু তোমার অবশ্যই শোনার প্রয়োজন আছে আর সেটা হলো এই যে, নিজের সন্তানের ইচ্ছাকে কখনোই অবহেলা করোনা। তুমি ভেবো না তুমি বাবা মা বলে নিজের ছেলেমেয়ের ভালো খারাপ সম্পর্কে সবই জানো আর সবই বোঝো। তা কিন্তু মোটেই নয়। সবাই নিজের ভালো-মন্দ বোঝে, এমনকি তোমার ছেলেমেয়েও।
যাই হোক, আবার CarryMinati -এর কথায় ফিরে আসি। আজকের বিষয়ের থেকে বাইরে চলে যাচ্ছি।
অন্য মানুষদের নিয়ে রোস্টিং ভিডিও বানানোর ফলে অজয়ের চ্যানেল অনেকবার কপিরাইট স্ট্রাইকের সম্মুখীন হয়। একবার তো তার চ্যানেলে একসাথে পরপর ৩টে কপিরাইট স্ট্রাইক চলে আসে। চ্যানেল প্রায় শেষ হয়ে যেতে বসে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে মানুষের ভালোবাসা এবং সাপোর্টের কারনে ইউটিউব তার চ্যানেল থেকে সেইসব কপিরাইট স্ট্রাইক সরাতে বাধ্য হয়।
এর কিছু বছর পর Carry নিজের আরেকটা চ্যানেল খোলেন CarryisLive নামে। সেখানে তিনি সম্পূর্ণভাবে গেমিং লাইভ স্ট্রিম করতে শুরু করেন। আজ সেই চ্যানেলও ভারতের সমস্ত বড় সব গেমিং চ্যানেলের মধ্যে একটা।
Credit: Beerbiceps YouTube Channel
Awards of CarryMinati:
1. ২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক “10 Next Generation Leaders” পুরস্কার।
2. ৫টি ইউটিউব ক্রিয়েটর পুরস্কার- ২টি সিল্ভার প্লে বটন (CarryMinati এবং CarryisLive), ২টি গোল্ডেন প্লে বটন (CarryMinati এবং CarryisLive), ১টি ডায়মন্ড প্লে বটন (CarryMinati).
3. ২০২০ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন কর্তৃক 30 Under 30 in Asia পুরস্কার।
আশা করি তুমি “Biography of CarryMinati in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+
সুকুমার রায়ের জীবনী | Sukumar Roy Biography in Bengali
November 27, 2022 by maximios • Quotes
নাম
সুকুমার রায়/Sukumar Ray
জন্ম
৩০শে অক্টোবর ১৮৮৭ (কোলকাতা)
অভিভাবক
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর (বাবা)
বিধুমুখী দেবী (মা)
দাম্পত্যসঙ্গী
সুপ্রভা দেবী
সন্তান
সত্যজিৎ রায়
জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম
আবোল তাবোল, হ-য-ব-র-ল, পাগলা দাশু, কাতুকুতু বুড়ো, হুঁকো মুখো হ্যাংলা ইত্যাদি
জাতীয়তা
ভারতীয়
ধর্ম
হিন্দু
ছদ্দনাম
উহ্যনাম পণ্ডিত
মৃত্যু
১০ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৩
মৃত্যুস্থান
১০০ নং গড়পার রোড, কোলকাতা
ব্লগটা পড়তে ভালো লাগছেনা? কোনো সমস্যা নেই তাতে | তুমি চাইলে আমার এই অডিও পডকাস্টটা শুনতে পারো | আর হ্যাঁ আমার এই পডকাস্ট শোকে follow করার জন্য ক্লিক করো এখানে…
বাংলা সাহিত্যে সুকুমার রায় হলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যার লেখা অসাধারণ কিছু সাহিত্যকর্ম আজও প্রত্যেক বাঙালীর মনে অমর হয়ে আছে | বিংশ শতাব্দীর ভারত তথা বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি হয়ে ওঠেন এক নবদিগন্তের পথিক | কবি, গল্পকার ও সাহিত্যিক সুকুমার রায় ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম সার্থকভাবে; অদ্ভুত এক সাহিত্য রীতির প্রবর্তন করেন যা প্রত্যেক বয়সের পাঠকদের মন কাড়তে সমানভাবে সক্ষম হয় |
Sukumar Roy Life History:
সুকুমার রায়ের জন্ম হয় ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর, কোলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে | তাঁর বাবার নাম ছিলো উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, যিনি কিনা বাংলার একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যক ছিলেন আর মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রধান সংস্কারক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে |
তুমি কি জানো, সুকুমার রায়ের আদি বাড়ি কোথায় ছিলো?
তাঁর আদি বাড়ি ছিলো বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া গ্রামে | তাঁর মোট ২জন ভাই ও ৩জন বোন ছিলো, যাদের নাম যথাক্রমে- সুবিনয়, সুবিমল, সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা ছিলো |
সুকুমার রায়ের, মহান সাহিত্যিক হয়ে ওঠার পিছনে তাঁর পরিবারের কিন্তু অবদান ছিলো প্রচুর | কারণ তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ছিলো একদম সাহিত্য অনুরাগী, যার সুবাদে তাঁর মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশ ঘটে |
Photo of Sukumar Roy (Credit:Wikipedia)
শোনা যায়, তিনি নাকি ছোটবেলা থেকেই মুখে মুখে নানা ধরণের ছড়া তৈরি করে ফেলতেন অনায়াসেই | এমনকি গান গাইতেন, নাটক করতেন আর কবিতাও লিখতেন | এক কথায় যদি বলতে হয় তাহলে সেইসময় থেকেই তিনি একধরনের মজাদার গোছের মানুষ ছিলেন এবং সবাইকে নেতৃত্ব দিতে খুব ভালোবাসতেন |
তাঁর বোন পুণ্যলতা তাঁর সম্পর্কে একসময় বলেছিলেন- “দাদা যেমন আমাদের খেলাধুলা ও সব কিছুরই পাণ্ডা ছিলো, তেমনি বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের মধ্যেও সে সর্দার ছিলো । তার মধ্যে এমন কিছু বিশেষত্ব ছিল যারজন্য সবাই তাকে বেশ মানতো । এমনকি বড়রাও তার কথার বেশ মূল্য দিতো”
Sukumar Roy Education:
চলো বন্ধু, এবার তবে জেনেনি সুকুমার রায়ের শিক্ষাজীবন সম্পর্কীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে |
সাহিত্যিক সুকুমার রায়, কলকাতার সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন এবং তারপর কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় অনার্স লাভের পর, তিনি মুদ্রণবিদ্যা সম্পর্কে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য ১৯১১ সালে বিদেশে যান |
সেখানে যাওয়ার পর তিনি ফটোগ্রাফি এবং মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন |
সুকুমার যখন ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছিলেন, সেইসময় অন্যদিকে তাঁর বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী জমি কিনে একটা উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি করেন এবং সেইসাথে নিজস্ব ছাপাখানাও স্থাপন করেন |
এইসবই তিনি তৈরী করেছিলেন ছোটদের জন্য একটা মাসিক পত্রিকা “সন্দেশের”, প্রকাশনার উদ্দেশ্যেই | কিন্তু ১৯১৩ সালে ইংল্যান্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করে সুকুমার রায় যখন কোলকাতায় ফিরে আসেন, তার ঠিক অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর বাবা উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয় |
বাবার মৃত্যুর পর একজন দায়িত্ববান ছেলে হিসাবে এরপর তিনিই সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন এবং সেই পত্রিকাতেই নিজের অভূতপূর্ব সাহিত্যকর্ম গুলো একে একে প্রকাশ করতে থাকেন |
দেখতে দেখতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুকুমার রায়, অল্পবয়সী পাঠকদের মাঝে এক প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন এবং সেইসাথে প্রচুর মধ্যবয়সী পাঠকদের কাছেও সমান জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হন|
বাবার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি এই সন্দেশ পত্রিকার ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন | তারপর সেইসবের দায়িত্ব তিনি আসতে আসতে তাঁর ছোটভাইকেই সম্পূর্ণরূপে দিয়ে দেন |
Sukumar Roy Work Life:
সুকুমার রায়ের কর্মজীবন সম্পর্কে বলার আগে এই তথ্য সম্পর্কে তোমার অবশ্যই জেনে রাখা দরকার | প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়ই তিনি কিন্তু গড়ে তুলেছিলেন, “ননসেন্স ক্লাব” | এই ক্লাবের মুখপত্র ছিল হাতে লেখা কাগজ-“সাড়ে বত্রিশ ভাজা” |
জানা যায়, সাড়ে বত্রিশ ভাজার পাতাতেই নাকি সুকুমার রায় জীবনের সর্বপ্রথম নিজের রচিত হাস্যরসযুক্ত কিছু লেখা প্রকাশ করেন | আর এই ক্লাবের জন্য তিনি দুটো নাটকও রচনা করেছিলেন, যেগুলোর নাম যথাক্রমে ছিলো- “ঝালাপালা” ও “লক্ষণের শক্তিশেল” |
ক্লাবের সদ্যসের নিয়েই তিনি, এই দুটো নাটককে সবার মাঝে পরিবেশন করেন | আর তুমি হয়তো বললে এটা বিশ্বাস করবেনা, ননসেন্স ক্লাবের প্রতিটা নাটক দেখার জন্য, সেইসময়কার প্রচুর ছেলে ও বুড়োরা ভীষন ভিড় জমাতো এবং তাদের সবারই পছন্দের নাট্যকার ছিলেন সুকুমার রায় |
আরো পড়ুন: সৌরভ গাঙ্গুলীর জীবনী
তাঁর বোন পুণ্যলতা এই নাটক সম্পর্কে একদা লিখেছিলেন –
“বাঁধা স্টেজ নেই, সীন নেই, সাজসজ্জা ও মেকআপ বিশেষ কিছুই নেই, শুধু কথা,সুরে,ভাবে, ভঙ্গিতেই তাদের অভিনয়ের বাহাদুরি ফুটে উঠতো, দাদা নাটক লিখতো, অভিনয় শেখাতো । হাঁদারামের অভিনয় করতে দাদার জুড়ি কেউ ছিল না । অভিনয় করতে ওরা নিজেরা যেমন আনন্দ পেতো, তেমনি সবাইকে আমোদে মাতিয়ে তুলতো । চারিদিকে উচ্ছ্বসিত হাসির স্রোত বইয়ে দিতো । ননসেন্স ক্লাবের অভিনয় দেখার জন্য সবাই উৎসুকও হয়ে থাকতোও”
এইসব নাটক করা ছাড়াও, সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন তাঁর লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ সবারই ভীষন পছন্দের ছিলো, যা আমি আগেই তোমাকে বলেছি | আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে তাঁর রচিত সব সাহিত্যকর্মই মাইলফলক হয়ে আছে আর ভবিষ্যতেও একই থাকবে |
তোমাকে তো আমি এটাও আগে বলেছিলাম যে তিনি, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অনার্স করার পর ইংল্যান্ডে পড়তে যান |
এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি আবারও “মনডে ক্লাব” নামে ননসেন্স ক্লাবেরই মতো একই ধরণের আরেকটা ক্লাব খুলেছিলেন | এই ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে, সদস্যরা সব বিষয় সম্পর্কেই আলোচনা করতেন ।
সুকুমার রায় এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র মজার ছড়ার আকারে তৈরীও করেছিলেন | সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মূলত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষণা ইত্যাদি ।
Sukumar Roy & Brahmo Samaj:
সাংস্কৃতিক কাজকর্ম ছাড়াও সুকুমার কিন্তু ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠীর এক তরুণ নেতা | এই ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে তৎকালীন সময়ে সবাই বলতো যে, এই সংগঠনের সদস্যরা মূলত একেশ্বরবাদী ও অদ্বৈতবাদী হিন্দু পুরান ও উপনিষদের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন |
এঁদের সমাজ সংস্কার বিষয়ক কাজকর্ম ও রীতিনীতি বাকিদের থেকে অনেক আলাদা ছিলো |
সুকুমার রায়, ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় প্রত্যেকের মাঝে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে “অতীতের কথা” নামক একটা কাব্য রচনা করেন | এছাড়াও তিনি ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থপনা করার লক্ষে সেই কাব্যকে বইয়ের আকারে প্রকাশও করেছিলেন |
Sukumar Roy & His Marriage life:
ইংল্যান্ডে থেকে নিজের পড়াশোনা শেষ করার পর, দুই মাসের মধ্যেই সুকুমারের বিয়ে হয় জগৎচন্দ্র দাশের মেজ মেয়ে সুপ্রভা দেবীর সঙ্গে | তাঁর ডাক নাম ছিল টুলু |
শোনা যায়, সুকুমার রায়ের বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিয়েতে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন । কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁকে চিঠি দিয়ে জানান, শিলাইদহে জমিদারীর কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন তিনি হয়তো তাঁর ছেলের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না । কিন্তু অবশেষে শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ, সুকুমার রায়ের বিয়েতে এসেছিলেন ।
Sukumar Roy & Suprabha Ray (Credit:Wikipedia)
এরপর বিয়ের ঠিক ৮ বছর পর অর্থ্যাৎ ১৯২১ সালের ২রা মে তারিখে সুপ্রভা দেবী তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তানের জন্ম দেন | যার নাম দেওয়া হয়েছিলো সত্যজিৎ | যিনি পরবর্তীকালে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা জগতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হয়ে ওঠেন, যা আমরা হয়তো প্রত্যেকেই জানি |
আরো পড়ুন: সত্যজিৎ রায়ের জীবনী
Some Famous Works of Sukumar Roy Are:
আবোল তাবোল (১৯২৩)পাগলা দাশু (১৯৪০)হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি খাই-খাই (১৯৫০) হ য ব র ল (১৯২৮) শব্দ কল্প দ্রুম
চলচ্চিত্রচঞ্চরী