অটল বিহারী বাজপেয়ীর জীবনী | Atal Bihari Vajpayee Biography

ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে অটল বিহারী বাজপেয়ী হলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁর অবদান ভারতের প্রত্যেকটি নাগরীকের ভোলার নয় |

তাঁর জন্ম হয় ২৫শে ডিসেম্বর ১৯২৪ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের গোয়ালিয়র শহরে | তাঁর বাবার নাম ছিল কৃষ্ণবিহারী বাজপেয়ী এবং মায়ের নাম ছিল কৃষ্ণা দেবী |

তাঁর বাবা কৃষ্ণবিহারী ছিলেন নিজের গ্রামের একসময়কার মহান কবি আর সেই সাথে ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক |

অটল বিহারীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় গোয়ালিয়র জেলার একটি ছোট্ট স্কুল সরস্বতী শিশু মন্দির থেকে এবং তারপর তিনি সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন গোয়ালিয়রের লক্ষীবাঈ কলেজ |

তিনি সেখানে হিন্দি, ইংরাজী এবং সংস্কৃত বিষয়ের উপর পড়াশোনা করে নিজের Graduation সম্পূর্ণ করেন | তারপর কানপুরের দয়ানন্দ এংলো বৈদিক মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি পলিটিক্যাল সায়েন্সে M.A সম্পূর্ণ করেন |

গোয়ালিয়রের আর্য কুমার সভা থেকে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন | তিনি সেই সময় আর্য সমাজের যুব শক্তি হিসেবে বিবেচিত হন এবং ১৯৪৪ সালে তিনি সেখানকার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করেন |

১৯৩৯ সালে একজন স্বেচ্ছাসেবকের মতো তিনি জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী ইউনিয়নে (আরএসএস) যোগ দেন এবং সেখানে বাবাসাহেব আপ্তেকে দেখে প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯৪০-১৯৪৪ সাল পর্যন্ত আরএসএস ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন | অবশেষে ১৯৪৭ সালে তিনি আরএসএসের একজন স্থায়ী কর্মী হয়ে ওঠেন ।

ভারতের বিভাজন যখন প্রায় নিশ্চিত, সেইসময় তিনি তাঁর Law এর পড়াশোনা মাঝখানেই ছেড়ে দেন এবং তাঁকে একজন প্রচারক রূপে উত্তরপ্রদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় |

সেখানে তিনি দীনদয়াল উপাধ্যায়ের সাথে মিলে রাষ্ট্রধর্ম (হিন্দি মাসিক), পঞ্চজন্য (হিন্দি সাপ্তাহিক), দৈনিক স্বদেশ ও বীর অর্জুন নামক ইত্যাদি সব খবরের কাগজের হয়ে কাজ করতে থাকেন |

তুমি কি জানো? অটল বিহারী বাজপেয়ী কোনোদিন বিয়ে করেননি, সারাজীবনই তিনি অবিবাহিতই ছিলেন | কিন্তু তাঁর নমিতা নামে একটি মেয়ে ছিল যাকে তিনি দত্তক নিয়ে ছিলেন |

নমিতা, ভারতীয় সাংস্কৃতিক নৃত্য এবং গানকে বেশ পছন্দ করতেন এবং সেই সাথে তিনি প্রকৃতিপ্রেমীও ছিলেন বলে জানা যায় |

রাজনৈতিক জীবন – Atal Bihari Vajpayee Political Career

আমদের দেশের পূর্ব প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী স্বাধীন ভারতীয় রাজনীতির এমন এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যাঁর রাজনৈতিক অবদান কোনোদিন ভোলার নয় |

একসময় ছিল যখন বাজপেয়ীর অমূল্য বক্তৃতা, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুও একদম মুগ্ধ হয়ে শুনতেন |

তোমায় এটাও জানিয়েদি যে, তিনি একসময় ভারতের বিদেশ মন্ত্রী হিসাবেও নির্বাচিত হন |

যখন বিজেপির অস্তিত্ব ভারতীয় সংসদ থেকে প্রায় মুছে যাওয়ার জোগার, তখন বাজপেয়ীর নেতৃত্বেই বিজেপি আবার রাজিনীতিতে নতুন জীবন পায় এবং দেশে তাঁর দল ক্ষমতাও আসে |

১৯৬৮ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি জনসংঘের সভাপতি ছিলেন এবং মরারজি দেসাইয়ের মন্ত্রিসভায়, তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবেও নিযুক্ত ছিলেন একসময় |

বিরোধী দলের অন্য সহকর্মীদের মতোই তাকেও জরুরী অবস্থার সময় জেলে পাঠানো হয়েছিল।

১৯৭৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করা হয় ।

এই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র অধিবেশনে গিয়ে হিন্দী ভাষায় নিজের বক্তব্য পেশ করেন যা তিনি তাঁর জীবনের একটি সেরা মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন ।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপির সভাপতি ছিলেন এবং এই সময়ে তিনি বিজেপি পার্লামেন্টারি পার্টির নেতাও ছিলেন।

অটল বিহারী বাজপেয়ী এখনও পর্যন্ত নয়বার লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন |

১৯৮৪ সালে তাঁকে গোয়ালিয় জেলার নির্বাচনে কংগ্রেসের একজন বিখ্যাত নেতা মাধবরাও সিন্ধিয়ার কাছে অনেক ভোট হারতে হয় | তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার একজন সদস্য ছিলেন।

Read More: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী

১৯৬৬ সালে ভারতীয় জনসাধারণ, রাজিনীতিতে একটি পরিবর্তনের আশায় ছিল, তাই বেশিরভাগ মানুষ অবশেষে তখন বিজেপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করে আনলো |সেইসাথে প্রথমবারের জন্য অটল বিহারী বাজপেয়ীও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন |

কিন্তু এই প্রধানমন্ত্রীত্ব তাঁর বেশিদিন কপালে ছিলোনা | মাত্র ১৩ দিনের মাথায় সব কিছু শেষ হয়ে যায় |

কিন্তু এইসবের পরেও বাজপেয়ীর মনোবল একদমই ভাঙ্গেনি | তিনি আবার ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর পার্টির বাকি সহকর্মীদের সাথে একজোট হয়ে, লোকসভায় তাঁর পার্টির সর্বাধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অবশেষে প্রমান করেন এবং আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন |

অটল বিহারী বাজপেয়ীর সময়ে, ভারত একটি পারমাণবিক শক্তি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়ে ওঠে | তিনি পারস্পরিক বাণিজ্য ও ভ্রাতৃত্বকে উন্নীত করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন ।

কিন্তু ১৩ মাস ব্যাপী মহান কর্মকান্ডের পর, তাঁর সরকার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে মাত্র এক ভোটে হেরে যায় |

এরপর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন |

তারপর, ১৯৯৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি, কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানের নৃসংশ আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং অবশেষে কার্গিলের যুদ্ধে ভারত জয়ের মুখ দেখে |

যুদ্ধ শেষে কিছুদিন পরেই,পুনরায় নির্বাচন হয় এবং জনগণের সমর্থনে তাঁর সরকার আবার পুন:গঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেইসময় তিনি তাঁর ক্ষমতার কিছু বিশেষ পরিচয় দেন সকলের মাঝে।

Important work of Atal Bihari Vajpayee

  • ১৯৯৮ সালের ১১ই ও ১৩ই মে, পোখরানে পাঁচটি পারমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী ভারতকে পারমাণবিক শক্তি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন |·
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ সালে, পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তিনি সদা-ই-সারহাদ নামে দিল্লী থেকে লাহৌর পর্যন্ত বাস ব্যবস্থা চালু করেন |
  • স্বর্ণ চতুর্ভুজ প্রকল্প
  • কাবেরী জল বিরোধের নিষ্পত্তি করেন, যেটা কিনা 100 বছরেরও বেশি সময়কার বিরোধ ছিল |

  • কাঠামোগত সৌধের জন্য বড় টাস্ক ফোর্স, বৈদুতিক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ রেগুলেটরি কমিশন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি কার্যসংস্থার গঠন ইত্যাদি তিনি করেন ।
  • দেশের সব বিমানবন্দর এবং জাতীয় সড়কের বিকাশ ও নতুন টেলিকম নীতি চালু করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
  •  আর্থিক উপদেষ্টা কমিটি, বাণিজ্য ও শিল্প কমিটি, জাতীয় নিরাপত্তা কমিটিও গঠন করেছিলেন, যারফলে কাজ খুব দ্রুত হতে থাকে দেশে |
  • urban ceiling act কে সমাপ্ত করে আবাস নির্মাণকে উৎসাহ দেন |
  • তিনি বীমা যোজনারও সূত্রপাত করেন যার ফলে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা (NRI) ব্যাপক উপকৃত হয় |

অটল বিহারীর এই সরকার সফল ভাবে তার মেয়াদ শেষ করে এবং এর মাধ্যমে তিনি দেশে জোটের রাজনীতিকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন | ওই পাঁচ বছরে, এনডিএ সরকার দরিদ্র, কৃষক এবং যুবকদের জন্য অনেক সুন্দর প্রকল্পের বাস্তবায়নও করেছিল |

তাঁর সরকার, ভারতের চার দিকে জাতীয় সড়কের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করার জন্য স্বর্ণ চতুর্ভুজ প্রকল্পটি শুরু করে|

যারফলে দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বাইয়কে জাতীয় সড়কের মাধ্যমে যুক্ত করা হয় | এরফলে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থারও অনেক উন্নতি সাধন হয় |

অবিরাম অসুখের কারণে এরপর Atal Bihari Vajpayee রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অটলজী ভারতীয় রাজনীতিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে চলে গেছিলেন, যা সবসময় মনে রাখার মত |

Read More:- ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জীবনী

দেশ ও বিদেশে তাঁকে অনেক পুরস্কার ও সন্মানেও ভূষিত করা হয়েছিল| ২৫শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালে, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে বাজপেয়ীজীকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান “ভারত রত্ন” হিসাবে ভূষিত ঘোষণা করা হয় ।

তাঁকে সম্মান জানাতে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী নিজেই তাঁর বাড়ি ২৭ শে মার্চ ২০১৫ সালে গেছিলেন পুরস্কারটি দেওয়ার জন্য । তাঁর জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরকে “good governance day” হিসাবে উদযাপন করা হয় সারা ভারতে।

Atal Bihari Vajpayee Awards

  • ১৯৯২ সাল: পদ্মভূষণ
  • ১৯৯৩ সাল: ডি.লিট (সাহিত্যে ডক্টরেট), কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়
  • ১৯৯৪ সাল: লোকমান্য তিলক পুরস্কার,শ্রেষ্ঠ সংসদ হিসাবে পুরস্কার,ভারতরত্ন পন্ডিত গোবিন্দ বল্লভ পন্ত পুরস্কার
  • ২০১৫ সাল: ভারত রত্ন, মুক্তিযুদ্ধ পুরষ্কার (বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সম্মননা)

অটল বিহারী বাজপেয়ীর জীবনাবসান – Atal Bihari Vajpayee Death

অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁর শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন ১৬ই অগাস্ট ২০১৮ সালে, All India Institute of Medical Sciences (AIIMS) হাসপাতালে বিকেল ৫:০৫ মিনিটে | মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৯৩ বছর | | তাঁর মৃত্যুতে গোটা ভারতবর্ষের মানুষ আজ গভীর ভাবে শোকাহত |

Hope you find this post about “Biography of Atal Bihari in Bengali” useful and inspiring. if you like this Information About Atal Bihari Vajpayee then please share on Facebook & Whatsapp. And If You Want to Share Your Own Motivational Poems & Travel Stories, Then Please Check Out Here.

শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+