ইরফান খানের সংক্ষিপ্ত জীবনী | Irrfan Khan Biography in Bengali

ইরফান খানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
Irrfan Khan Biography in Bengali

নাম

ইরফান খান/Sahabzade Irfan Ali Khan

জন্ম

৭ই জানুয়ারী ১৯৬৭, টঙ্ক জেলা, জয়পুর, রাজস্থান

অভিভাবক

জাগিরদার খান (বাবা)
বেগম খান (মা)

দাম্পত্য সঙ্গী

সুতপা সিকদার

সন্তান

বাবিল খান
অয়ন খান

পেশা

চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক

মৃত্যু

২৯শে এপ্রিল ২০২০, (বয়স ৫৩)

ভারতীয় সিনেমা জগতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হলেন ইরফান খান| তাঁর মতো উচ্চমানের অভিনেতাকে পেয়ে আজ প্রত্যেকটা ভারতবাসী নিশ্চই গর্বিতবোধ করেন| সিনেমা ছিলো তাঁর বিস্তর সাম্রাজ্য আর সেই সাম্রাজ্যের তিনি ছিলেন এক একান্ত অধিপতি|

তাঁর প্রত্যেকটা সিনেমাই যেন মানুষকে কিছুনা কিছু অবশ্যই শেখাতো| আজ ভাবলেই কেন জানিনা বিশ্বাস হয়না যে, এই মানুষটা আজ আর আমাদের মধ্যে আর নেই, চলে গেছেন আমাদের ফেলে কত কত দূরে|

সত্যি বলতে কি, যেদিন আমি জানতে পারলাম যে তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই, বিশ্বাস করো খুবই কান্না পাচ্ছিলো সেদিন| মনে হচ্ছিলো যেন, নিজেরই কোনো এক স্পেশাল মানুষ সারাজীবনের মতো হারিয়ে গেছে|

আমি এরজন্য দুঃখে দুদিন কাজও করতে পারিনি মন দিয়ে| বাস্তবটাকে খুবই কষ্টে মেনে নিতে হয়েছে অবশেষে|

আজকের এই আর্টিকেল তাঁকেই শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখা| আশা করি তোমার ভালো লাগবে|

Early Life of Irrfan Khan:

জনপ্রিয় অভিনেতা সাহাবজাদা ইরফান আলী খানের জন্ম হয় ৭ই জানুয়ারী ১৯৬৭ সালে, রাজস্থানের জয়পুরের অন্তর্গত টঙ্ক জেলায়| তাঁর বাবার নাম ছিলো জাগিরদার খান যিনি কিনা একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত টায়ারের ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মায়ের নাম ছিলো বেগম খান|

এই সাহাবজাদা” নামটি ইরফানের বিশেষ পছন্দের ছিলো না, তাই তিনি পরবর্তী সময়ে এসে নামটাকে বাতিল করে দেন, কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে ভবিষ্যতে তাঁর পরিবারের দেওয়া এই পরিচয়টি  তাঁর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে উঠতে পারে এইজন্য|

তাঁর যখন খুব অল্প বয়স তখন তাঁর বাবা জাগিরদার খান মারা যান শারীরিক অসুস্থতার কারণে| বাবার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অনেকেই তাঁকে বলেন তাঁর বাবার সেই টায়ারের ব্যবসাকে সামলানোর জন্য|

কিন্তু ইন্টারেস্ট না থাকায় ইরফান সেই ব্যবসাকে করতে একদমই চাইনি| তিনি সবাইকে বলেন তাঁর ইন্টারেস্ট অভিনয়ে, তিনি একজন অভিনেতা হতে চান এবং সেটাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসাবে বানাতে চান|

আরো পড়ুন: শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

তাঁর মুখ থেকে পরিবারের লোকেরা এবং বন্ধুরা এই কথা শুনে একটু অসুখীই হন কারণ তারা মনে করেছিলেন সিনেমার জগতে নাকি তাঁর ভবিষ্যত গড়ে ওঠাই কঠিন|

এই বিষয়ে তিনি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- “কেউ কল্পনাই করেনি যে আমি অভিনেতা হতে পারবো। কারণ আমি খুবই লাজুক প্রকৃতির ছিলাম কিন্তু আমার নিজের মনে মধ্যে এই নিয়ে ইচ্ছা ছিলো ভীষন প্রবল।”

Work Life of Irrfan Khan:

সাল ১৯৮৭-তে নতুন দিল্লির রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে তিনি এরপর মুম্বাই শহরে চলে আসেন সিনেমায় কাজ করার উদ্দেশ্যে| কিন্তু একবছর ধরে টানা কাজ করার পরেও তিনি সিনেমায় নামমাত্র অভিনয় করার সুযোগ পেতেন আর যাও বা সুযোগ পেতেন, সেইসব সিনেমায় তার অভিনীত দৃশ্যগুলির বেশিরভাগটাই কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হতো|

যা দেখে ইরফান খান এবার ঠিক করেন ছোট পর্দা অর্থাৎ সিরিয়ালে অংশ নেওয়ার| নিজের পরিচিতিকে তিনি এবার সেখান থেকেই মানুষের মাঝে বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে থাকেন|

তিনি সর্বপ্রথম দূরদর্শনে “লাল ঘাস পর নীলে ঘোড়ে” নামের এক নাটকে ভ্লাদিমির লেনিনের চরিত্রে অভিনয় করেন| এই নাটকটা মিখাইল সাত্রভের লেখা একটা রুশ নাটকের উপর ভিত্তি করে নির্মান করা হয়েছিলো যেটার হিন্দি অনুবাদ করেছিলেন স্যার উদয় প্রকাশ|

এছাড়া তিনি ষ্টারপ্লাসে “ডর” নামের আরেকটা ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন। সেই ধারাবাহিকে তিনি ছিলেন একজন সাইকো কিলারের ভূমিকায় কে কে মেননের বিপরীতে| সেই ধারাবাহিক দর্শকদের মাঝে ভালোই প্রশংসা কোড়ায়|

এই দুটো ছাড়াও তিনি আরো অসংখ্য টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন| সেগুলো হলো যথাক্রমে- শ্রীকান্ত, ভারত এক খোঁজ, কাহকাসান, চানক্য, শেষ প্রশ্ন, কিরদার, চন্দ্রকান্ত, দ্য গ্রেট মারাঠা, বানেগী আপনি বাত, জাস্ট মহাব্বাত, জয় হনুমান, বম্বে ব্লু, সত্য, স্পর্শ, গীতা রহস্য, হিস্স্ কই হে, মানো য়া না মানো, ডন, ইন ট্রিটমেন্ট, টোকিও ট্রায়াল|

Bollywood Life of Irrfan Khan:

এতগুলো ধারাবাহিকে ভালো অভিনয় করার পর তিনি যখন আবার বলিউড সিনেমায় অভিনয় করতে আসেন, তিনি সেইবারও ব্যর্থতার স্বীকার হন| তাঁর প্রথম কয়েকটি সিনেমা একদম ফ্লপ যায়|

অবশেষে ২০০১ সাল হয় সেই বিশেষ বছর, যেই বছর থেকে তাঁর ভাগ্যের চাকা অবশেষে ঘুরতে শুরু করে| সেই বছর তিনি অভিনয় করেন “ওয়ারিয়র” নামের একটা সিনেমায়| ব্রিটিশ পরিচালক আসিফ কাপাডিয়া সেই সিনেমাতে কোনো প্রতিষ্ঠিত হলিউড অভিনেতার খরচ বহন করতে সক্ষম ছিলেন না, তাই অচেনা কোনো প্রতিভাবান অভিনেতা খুঁজছিলেন।

সেই সিনেমা, বাফটায় (British Academy of Film and Television Arts) সেরা ব্রিটিশ ফিল্ম হিসেবে আলেক্সান্ডার কোরডা পুরস্কার পায়।

এরপর হলিউডে তাঁর অভিনয় দেখে শোরগোল পরে যাওয়ার পর, তা জানতে পেরে বলিউড কর্তাদেরও তখন টনক নড়ে| একের একের সিনেমার অফার তাঁর কাছে তখন আসতে শুরু করে|

তাঁর অভিনীত বিখ্যাত কিছু বলিউড এবং হলিউড সিনেমা হলো যথাক্রমে- পান সিং তোমার, দ্য লাঞ্চবক্স, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড, লাইফ অফ পাই, স্লামডগ মিলিয়ানর ,পিকু, হিন্দি মিডিয়াম, মাকবুল, আংরেজি মিডিয়াম প্রভৃতি|

আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, তিনি হলেন ভারতের সর্বপ্রথম একজন অভিনেতা যিনি কিনা দুটো অস্কারজয়ী সিনেমায় কাজ করেছেন| সেই সিনেমা দুটো হলো- লাইফ অফ পাই আর স্লামডগ মিলিয়ানর|

Marriage Life of Irrfan Khan:

নতুন দিল্লির রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সেখানকার এক্টিং ক্লাসে সুতপা সিকদার নামের এক স্টুডেন্টের প্রেমে পরেন| আর ব্যাস তারপর কি, সেই প্রেম ও ভালোবাসা ধীরে ধীরে বিয়ের দিকে গড়ায়|

অবশেষে ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সুতপা সিকদারকে বিয়ে করেন| তারপর তাদের দুটো সন্তানও হয়, যাদের তারা নাম রাখেন- বাবিল খান ও অয়ন খান|

Death Life of Irrfan Khan:

২০১৮ সালে তাঁর শরীরে নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারের শনাক্ত করা হয়| তারপর লন্ডনে এক বছর চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে ফিরে আসেন।

পরে জানা যায় তিনি এরফলে ক্যান্সার নামের মারন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন, যেটাকে পুরোপুরী ঠিক করা একদমই অসম্ভব ব্যাপার| কিন্ত সেটার জন্য তিনি তাঁর দর্শকদের তাঁর অভিনীত নতুন সিনেমা দেখার থেকে একদমই বঞ্চিত করেননি|

ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যেও তিনি করে গেছিলেন অনেক সিনেমার শুট| তাঁর শেষ ছবি “আংরেজি মিডিয়াম” যা মুক্তি পায় ১৩ই মার্চ 2020 সালে| কিন্তু সারা দেশে করোনার প্রকোপ তীব্রভাবে বাড়ার ফলে দেশজুড়ে লকডাউন হবার সুবাদে তাঁর শেষ এই সিনেমা, সিনেমাহলে ভালো মতো করে মুক্তি পেতেই পারেনা|

আরো পড়ুন: কিশোর কুমারের জীবনী

অবশেষে দীর্ঘ রোগভোগের পর ভারতবর্ষের সিনেমা জগতের রত্ন ইরফান খান ২৯শে এপ্রিল 2020 সালে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন| মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৫৩ বছর| 

লেখাটা শেষ করার আগে আমি তোমাকে একটাই অনুগ্রহ করতে চাই যে, পারলে ইরফান স্যারের শেষ সিনেমা “আংরেজি মিডিয়াম” অবশ্যই দেখো| তোমার অবশ্যই এই সিনেমাটা দেখে মন জুড়িয়ে যাবেই|

আশা করি তুমি Irrfan Khan Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |

শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+