সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবনী
Syed Mustafa Siraj Biography in Bengali
নাম
|
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ / Syed Mustafa Siraj
|
জন্ম
|
১৪ই অক্টোবর ১৯৩০ সাল,মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রাম
|
অভিভাবক
|
সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসী (বাবা)
আনোয়ারা বেগম (মা)
|
দাম্পত্যসঙ্গী
|
হাসনে আরা সিরাজ
|
পেশা
|
নাচ-গানের প্রশিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, ঔপন্যাসিক
|
ধর্ম
|
ইসলাম
|
জাতীয়তা
|
ভারতীয়
|
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম
|
কর্নেল সমগ্র, তরঙ্গিনীর চোখ, বন্যা, নিশিমৃগয়া, কামনার সুখদুঃখ, নিশিলতা প্রভৃতি
|
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার
|
আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ভুয়ালকা পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, নরসিংহদাস পুরস্কার প্রভৃতি
|
মৃত্যু
|
৪ই সেপ্টেম্বর ২০১২, কলকাতা
|
বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত একজন কথাশিল্পী হলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ | তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ঔপন্যাসিকদের সমকালীন | তাঁর অনন্য সব শিল্পকর্ম আজও প্রত্যেক বাঙালী পাঠকদের সমান পছন্দের | তিনি মূলত ভৌতিক গল্প ও গোয়েন্দা গল্প লেখার জন্য বিখ্যাত, কর্নেল কাহিনী যার এক অনবদ্য উদাহরণ |
Early Life of Syed Mustafa Siraj:
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জন্ম হয় ১৪ই অক্টোবর ১৯৩০ সালে, মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত খোশবাসপুর নামক গ্রামে | তাঁর জীবনবোধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইসলাম ও হিন্দু সংস্কৃতির ভাস্কর্যের মেলবন্ধন ঘটেছিলো । তাঁর বাবার নাম ছিলো সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসী, যিনি কিনা একজন অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি যোগ দিয়েছিলেন গান্ধীজীর সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনে | অন্যদিকে তাঁর মা আনোয়ারা বেগম ছিলেন একদম সাহিত্যিক গোছের মানুষ, একসময় তিনি কবিতা ও গল্প লিখতেন |
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তাঁর মা বেশিদিন বাঁচেননি | তাঁর জন্মের ঠিক নয় বছর পর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন | নিজের আত্মকথায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এই বিষয়ে একসময় লিখেছিলেন –
“ওই বয়সে মার মৃত্যু হলো, কিন্তু এই মৃত্যু আমাকে ছুঁলো না । প্রকৃতি আমাকে কেড়ে নিয়েছেন কবে, আমার আসল মা যে তিনিই! আশ্চর্য নির্বিকার থেকে গেলাম । বিধবা মাসী মা হয়ে বাড়ি এলেন”
এখানে যে বিধবা মাসির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি হলেন একলিমা বেগম | যিনি কিন্তু তাঁর দিদির মতোই সাহিত্য-অনুরাগিণী ছিলেন | হয়তো মা ও মাসির মধ্যেকার এই সাহিত্যভাবই পরবর্তীকালে সিরাজকে একজন অসাধারণ সাহিত্যিকে পরিনত করার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে |
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ কিন্তু তাঁর আট ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন | তাঁর বাবার প্রথম পক্ষের স্ত্রী অর্থাৎ আনোয়ারা বেগমের সন্তান ছিলো যথাক্রমে- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, আনোয়ার আলম, সৈয়দ শামসুল আজাদ ও সৈয়দ মতিন হায়দার এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী অর্থাৎ একলিমা বেগমের সন্তান ছিলো যথাক্রমে- সৈয়দ খালেদ নৌমান, সৈয়দ কওসর জামাল, জমিল সৈয়দ ও সৈয়দ হাসনাত জালাল ।
তোমার এটা জানা দরকার যে, তাদের প্রত্যেক ভাই কিন্তু তাঁরই মতো সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন | এমনকি সিরাজের বেগম হাসনে আরাও কিন্তু একজন আদর্শ গৃহিনীর সাথে সাথে ছিলেন একজন কবি, যিনি কিনা “লাল শিমুলের দিন” কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন |
Education Life of Syed Mustafa Siraj:
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের শিক্ষাজীবন শুরু হয় নবগ্রাম জেলার গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় থেকে | সেখানে তিনি বেশ কিছু বছর পড়াশোনা করেন এবং নবগ্রাম গোপালপুরের প্রেক্ষাপটে তিনি রচনা করেন “প্রেমের প্রথম পাঠ” নামক তাঁর প্রথম উপন্যাস | তারপর পড়াশোনা শেষ করে তিনি এরপর ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে এবং সেখান থেকে ১৯৫০ সালে তিনি বিএ পাশ করেন |
এরপর বেশ কিছুমাস তিনি মেদিনীপুরের পানিপারুলে সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন আর তারপর কলকাতায় চলে এসে “ইত্তেফাক” পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে কাজ করতে থাকেন |
আরো পড়ুন: সত্যজিৎ রায়ের জীবনী
Nature of Syed Mustafa Siraj:
তুমি কি এটা জানো! সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছোটবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছিলেন? এরপর তিনি বাংলার রাঢ় অঞ্চলের প্রখ্যাত লোকনাট্য দল “আলকাপের” এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ,গান ও অভিনয়ে অংশ নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন ৷ তারপর তিনি নিজেকে সেই দলের একজন ওস্তাদ শিল্পী হিসাবে পরিনতও করেছিলেন |
তিনি সেই নাট্যদলের নাচ ও গানের প্রশিক্ষক ছিলেন | শোনা যায়, তিনি নাকি নিজে আলকাপেরের আসরে বসে পোট্রোম্যাক্সের আলোয় দর্শকের সামনে বাঁশের বাঁশি বাজাতেন । পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খন্ডের মতো বিভিন্ন রাজ্যে তিনি ও তাঁর দল ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন অনুষ্ঠানের জন্য |
জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তিনি কাটিয়েছিলেন, সেইজন্য পরবর্তী জীবনে কলকাতায় বাস করলেও তিনি নিজেকে কলকাতাবাসী প্রবাসী ভাবতেই ভালোবাসতেন | কিন্তু যতই তিনি কলকাতায় বাস করুন না কেন, প্রকৃতির প্রতি অগাধ প্রেম থাকার জন্য তিনি সুযোগ পেলেই বার বার মুর্শিদাবাদের গ্রামে পালিয়ে যেতেন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ।
খাল, বিল, মাঠ ও দ্বারকা নদীর অববাহিকায় বেড়ে ওঠা এই মানুষটা; সর্বদাই গাছপালা, রঙ বেরঙের প্রাণী, প্রজাপতি প্রভৃতির উদার আহ্বানে মনপ্রাণে বেশ মেতে থাকতেন বলে জানা যায় |
তাঁর প্রত্যেক উপন্যাসে রাঢ়-বাংলার নিসর্গপ্রকৃতির উদ্দাম বন্যভাব এবং প্রান্তিক মানুষের বিচিত্র জীবনধারার স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় | তিনি ছোটবেলা থেকেই কিশোর মন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন এবং জটিল কৃত্রিম জগৎকে সর্বদা পাশ কাটিয়ে চলারই চেষ্টা করেছিলেন | তাঁর সেইসব ভাবনাগুলোরই প্রতিবিম্ব আমরা দেখি তার কিশোর সাহিত্যে ।
Literary Creation of Syed Mustafa Siraj:
কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবন প্রকৃতি একদম ছন্নছাড়া গোছের ছিলো বলে জানা যায় | তিনি জীবিকার টানে যখন কলকাতায় আসেন তখন তিনি এখানে বিভিন্ন ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখতেন, কাজ করার পাশাপাশি | তিনি দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবেও চাকরি করেছিলেন |
তাঁর সময়েই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বরেন গঙ্গোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নামী কথাসাহিত্যিকরাও পাঠক সমাজে পরিচিতি লাভ করেন | কিন্তু এঁনাদের প্রত্যেকের মধ্যে সিরাজ ছিলেন একটু আলাদা ধাঁচের কথাসাহিত্যিক | তাঁর অভিজ্ঞতা ছিলো বাকি সবার থেকে প্রচুর, এবং যেহেতু তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতি, সমাজের অবস্থা ও মানুষের স্বাভাবিক চরিত্রকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছিলেন তাঁর গল্পের মাধ্যমে, তাই বেশিরভাগ মানুষ তাঁর সেইসব সৃষ্টিকর্মের সাথে নিজেরদের বাস্তব জীবনকে মেলাতে পেরেছিলো অতি সহজেই |
তিনি জীবিত অবস্থায় মোট ১৫০টি উপন্যাস ও ৩০৬টি ছোট গল্প লিখেছেন । ছোট শিশুদের জন্য তিনি রচনা করেছিলেন, “গোয়েন্দা কর্নেল” নামক চরিত্র এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রচনা করেছিলেন “কর্নেল সমগ্র”, যা বিভিন্ন খন্ডের আকারে বাজারে প্রকাশ পায় | গোয়েন্দা গল্প ছাড়াও তিনি রচনা করেন হাঁড়-কাঁপানো কিছু ভৌতিক গল্পও |
তাঁর বিখ্যাত কিছু সাহিত্যকর্ম যথাক্রমে- “তরঙ্গিনীর চোখ”, “জল সাপ ভালোবাসা”, “হিজলবিলের রাখালেরা”, “রণভূমি”, “উড়োপাখির ছায়া”, “উত্তর জাহ্নবী”, “তৃণভূমি”, “প্রেমের প্রথম পাঠ”, “বন্যা”,”নিশিমৃগয়া”,”কামনার সুখদুঃখ”, “নিশিলতা”, “এক বোন পারুল”, “কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি”, “রক্তের প্রত্যাশা”, “মৃত্যুর ঘোড়া”, “গোঘ্ন”, “রানীরঘাটের বৃত্তান্ত”, “নীলঘরের নটী”, “পিঞ্জর সোহাগিনী”, “কিংবদন্তির নায়ক”,”হিজলকন্যা”,”আশমানতারা”, “নৃশংস”,”রোডসাহেব”, “জানগুরু” প্রভৃতি |
Awards and Honors of Syed Mustafa Siraj:
বাংলা সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর অনবদ্য সব সাহিত্যকর্মের জন্য অনেক সন্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হন | তিনি ভারত সরকার কর্তৃক সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার পান “অলীক মানুষ” উপন্যাস লেখার জন্য এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বঙ্কিম পুরস্কারও পান | তারপর ১৯৭৯ সালে তিনি পান আনন্দ পুরস্কার | তাঁর লেখা গল্প “অমর্ত্য প্রেমকথা” এর জন্য তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নরসিংহদাস স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন |
এছাড়াও তিনি বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার, শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, সুশীলা দেবী বিড়লা স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি আরও অনেক পুরস্কার পান তাঁর সাহিত্য কর্মের জন্য |
আরো পড়ুন: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী
Death of Syed Mustafa Siraj:
অবশেষে ৪ই সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে কলকাতার বাসভূমিতে, বার্ধক্য জনিত শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি মারা যান | মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮১ বছরের কাছাকাছি |
Buy Mustafa Siraj’s Books:
1. Kishor Colonel Samagra (Vol-1)
2. Bhoutik Galpo Samagra
আশা করি তুমি “Syed Mustafa Siraj Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবনী | Syed Mustafa Siraj Biography in Bengali
November 26, 2020 by maximios • Quotes
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবনী
Syed Mustafa Siraj Biography in Bengali
নাম
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ / Syed Mustafa Siraj
জন্ম
১৪ই অক্টোবর ১৯৩০ সাল,মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রাম
অভিভাবক
সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসী (বাবা)
আনোয়ারা বেগম (মা)
দাম্পত্যসঙ্গী
হাসনে আরা সিরাজ
পেশা
নাচ-গানের প্রশিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, ঔপন্যাসিক
ধর্ম
ইসলাম
জাতীয়তা
ভারতীয়
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম
কর্নেল সমগ্র, তরঙ্গিনীর চোখ, বন্যা, নিশিমৃগয়া, কামনার সুখদুঃখ, নিশিলতা প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার
আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ভুয়ালকা পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, নরসিংহদাস পুরস্কার প্রভৃতি
মৃত্যু
৪ই সেপ্টেম্বর ২০১২, কলকাতা
বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত একজন কথাশিল্পী হলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ | তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ঔপন্যাসিকদের সমকালীন | তাঁর অনন্য সব শিল্পকর্ম আজও প্রত্যেক বাঙালী পাঠকদের সমান পছন্দের | তিনি মূলত ভৌতিক গল্প ও গোয়েন্দা গল্প লেখার জন্য বিখ্যাত, কর্নেল কাহিনী যার এক অনবদ্য উদাহরণ |
Early Life of Syed Mustafa Siraj:
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জন্ম হয় ১৪ই অক্টোবর ১৯৩০ সালে, মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত খোশবাসপুর নামক গ্রামে | তাঁর জীবনবোধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইসলাম ও হিন্দু সংস্কৃতির ভাস্কর্যের মেলবন্ধন ঘটেছিলো । তাঁর বাবার নাম ছিলো সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসী, যিনি কিনা একজন অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি যোগ দিয়েছিলেন গান্ধীজীর সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনে | অন্যদিকে তাঁর মা আনোয়ারা বেগম ছিলেন একদম সাহিত্যিক গোছের মানুষ, একসময় তিনি কবিতা ও গল্প লিখতেন |
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তাঁর মা বেশিদিন বাঁচেননি | তাঁর জন্মের ঠিক নয় বছর পর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন | নিজের আত্মকথায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এই বিষয়ে একসময় লিখেছিলেন –
“ওই বয়সে মার মৃত্যু হলো, কিন্তু এই মৃত্যু আমাকে ছুঁলো না । প্রকৃতি আমাকে কেড়ে নিয়েছেন কবে, আমার আসল মা যে তিনিই! আশ্চর্য নির্বিকার থেকে গেলাম । বিধবা মাসী মা হয়ে বাড়ি এলেন”
এখানে যে বিধবা মাসির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি হলেন একলিমা বেগম | যিনি কিন্তু তাঁর দিদির মতোই সাহিত্য-অনুরাগিণী ছিলেন | হয়তো মা ও মাসির মধ্যেকার এই সাহিত্যভাবই পরবর্তীকালে সিরাজকে একজন অসাধারণ সাহিত্যিকে পরিনত করার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে |
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ কিন্তু তাঁর আট ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন | তাঁর বাবার প্রথম পক্ষের স্ত্রী অর্থাৎ আনোয়ারা বেগমের সন্তান ছিলো যথাক্রমে- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, আনোয়ার আলম, সৈয়দ শামসুল আজাদ ও সৈয়দ মতিন হায়দার এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী অর্থাৎ একলিমা বেগমের সন্তান ছিলো যথাক্রমে- সৈয়দ খালেদ নৌমান, সৈয়দ কওসর জামাল, জমিল সৈয়দ ও সৈয়দ হাসনাত জালাল ।
তোমার এটা জানা দরকার যে, তাদের প্রত্যেক ভাই কিন্তু তাঁরই মতো সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন | এমনকি সিরাজের বেগম হাসনে আরাও কিন্তু একজন আদর্শ গৃহিনীর সাথে সাথে ছিলেন একজন কবি, যিনি কিনা “লাল শিমুলের দিন” কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন |
Education Life of Syed Mustafa Siraj:
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের শিক্ষাজীবন শুরু হয় নবগ্রাম জেলার গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় থেকে | সেখানে তিনি বেশ কিছু বছর পড়াশোনা করেন এবং নবগ্রাম গোপালপুরের প্রেক্ষাপটে তিনি রচনা করেন “প্রেমের প্রথম পাঠ” নামক তাঁর প্রথম উপন্যাস | তারপর পড়াশোনা শেষ করে তিনি এরপর ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে এবং সেখান থেকে ১৯৫০ সালে তিনি বিএ পাশ করেন |
এরপর বেশ কিছুমাস তিনি মেদিনীপুরের পানিপারুলে সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন আর তারপর কলকাতায় চলে এসে “ইত্তেফাক” পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে কাজ করতে থাকেন |
আরো পড়ুন: সত্যজিৎ রায়ের জীবনী
Nature of Syed Mustafa Siraj:
তুমি কি এটা জানো! সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছোটবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছিলেন? এরপর তিনি বাংলার রাঢ় অঞ্চলের প্রখ্যাত লোকনাট্য দল “আলকাপের” এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ,গান ও অভিনয়ে অংশ নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন ৷ তারপর তিনি নিজেকে সেই দলের একজন ওস্তাদ শিল্পী হিসাবে পরিনতও করেছিলেন |
তিনি সেই নাট্যদলের নাচ ও গানের প্রশিক্ষক ছিলেন | শোনা যায়, তিনি নাকি নিজে আলকাপেরের আসরে বসে পোট্রোম্যাক্সের আলোয় দর্শকের সামনে বাঁশের বাঁশি বাজাতেন । পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খন্ডের মতো বিভিন্ন রাজ্যে তিনি ও তাঁর দল ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন অনুষ্ঠানের জন্য |
জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তিনি কাটিয়েছিলেন, সেইজন্য পরবর্তী জীবনে কলকাতায় বাস করলেও তিনি নিজেকে কলকাতাবাসী প্রবাসী ভাবতেই ভালোবাসতেন | কিন্তু যতই তিনি কলকাতায় বাস করুন না কেন, প্রকৃতির প্রতি অগাধ প্রেম থাকার জন্য তিনি সুযোগ পেলেই বার বার মুর্শিদাবাদের গ্রামে পালিয়ে যেতেন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ।
খাল, বিল, মাঠ ও দ্বারকা নদীর অববাহিকায় বেড়ে ওঠা এই মানুষটা; সর্বদাই গাছপালা, রঙ বেরঙের প্রাণী, প্রজাপতি প্রভৃতির উদার আহ্বানে মনপ্রাণে বেশ মেতে থাকতেন বলে জানা যায় |
তাঁর প্রত্যেক উপন্যাসে রাঢ়-বাংলার নিসর্গপ্রকৃতির উদ্দাম বন্যভাব এবং প্রান্তিক মানুষের বিচিত্র জীবনধারার স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় | তিনি ছোটবেলা থেকেই কিশোর মন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন এবং জটিল কৃত্রিম জগৎকে সর্বদা পাশ কাটিয়ে চলারই চেষ্টা করেছিলেন | তাঁর সেইসব ভাবনাগুলোরই প্রতিবিম্ব আমরা দেখি তার কিশোর সাহিত্যে ।
Literary Creation of Syed Mustafa Siraj:
কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবন প্রকৃতি একদম ছন্নছাড়া গোছের ছিলো বলে জানা যায় | তিনি জীবিকার টানে যখন কলকাতায় আসেন তখন তিনি এখানে বিভিন্ন ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখতেন, কাজ করার পাশাপাশি | তিনি দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবেও চাকরি করেছিলেন |
তাঁর সময়েই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বরেন গঙ্গোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নামী কথাসাহিত্যিকরাও পাঠক সমাজে পরিচিতি লাভ করেন | কিন্তু এঁনাদের প্রত্যেকের মধ্যে সিরাজ ছিলেন একটু আলাদা ধাঁচের কথাসাহিত্যিক | তাঁর অভিজ্ঞতা ছিলো বাকি সবার থেকে প্রচুর, এবং যেহেতু তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতি, সমাজের অবস্থা ও মানুষের স্বাভাবিক চরিত্রকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছিলেন তাঁর গল্পের মাধ্যমে, তাই বেশিরভাগ মানুষ তাঁর সেইসব সৃষ্টিকর্মের সাথে নিজেরদের বাস্তব জীবনকে মেলাতে পেরেছিলো অতি সহজেই |
তিনি জীবিত অবস্থায় মোট ১৫০টি উপন্যাস ও ৩০৬টি ছোট গল্প লিখেছেন । ছোট শিশুদের জন্য তিনি রচনা করেছিলেন, “গোয়েন্দা কর্নেল” নামক চরিত্র এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রচনা করেছিলেন “কর্নেল সমগ্র”, যা বিভিন্ন খন্ডের আকারে বাজারে প্রকাশ পায় | গোয়েন্দা গল্প ছাড়াও তিনি রচনা করেন হাঁড়-কাঁপানো কিছু ভৌতিক গল্পও |
তাঁর বিখ্যাত কিছু সাহিত্যকর্ম যথাক্রমে- “তরঙ্গিনীর চোখ”, “জল সাপ ভালোবাসা”, “হিজলবিলের রাখালেরা”, “রণভূমি”, “উড়োপাখির ছায়া”, “উত্তর জাহ্নবী”, “তৃণভূমি”, “প্রেমের প্রথম পাঠ”, “বন্যা”,”নিশিমৃগয়া”,”কামনার সুখদুঃখ”, “নিশিলতা”, “এক বোন পারুল”, “কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি”, “রক্তের প্রত্যাশা”, “মৃত্যুর ঘোড়া”, “গোঘ্ন”, “রানীরঘাটের বৃত্তান্ত”, “নীলঘরের নটী”, “পিঞ্জর সোহাগিনী”, “কিংবদন্তির নায়ক”,”হিজলকন্যা”,”আশমানতারা”, “নৃশংস”,”রোডসাহেব”, “জানগুরু” প্রভৃতি |
Awards and Honors of Syed Mustafa Siraj:
বাংলা সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর অনবদ্য সব সাহিত্যকর্মের জন্য অনেক সন্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হন | তিনি ভারত সরকার কর্তৃক সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার পান “অলীক মানুষ” উপন্যাস লেখার জন্য এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বঙ্কিম পুরস্কারও পান | তারপর ১৯৭৯ সালে তিনি পান আনন্দ পুরস্কার | তাঁর লেখা গল্প “অমর্ত্য প্রেমকথা” এর জন্য তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নরসিংহদাস স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন |
এছাড়াও তিনি বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার, শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, সুশীলা দেবী বিড়লা স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি আরও অনেক পুরস্কার পান তাঁর সাহিত্য কর্মের জন্য |
আরো পড়ুন: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী
Death of Syed Mustafa Siraj:
অবশেষে ৪ই সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে কলকাতার বাসভূমিতে, বার্ধক্য জনিত শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি মারা যান | মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮১ বছরের কাছাকাছি |
Buy Mustafa Siraj’s Books:
1. Kishor Colonel Samagra (Vol-1)
2. Bhoutik Galpo Samagra
আশা করি তুমি “Syed Mustafa Siraj Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |
শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+