হুমায়ুন আজাদের জীবনী | Humayun Azad Biography in Bengali

হুমায়ুন আজাদের জীবনী
Humayun Azad Biography in Bengali

নাম

হুমায়ুন আজাদ/Humayun Azad

জন্ম

২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ কামারগাঁ, বিক্রমপুর (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ), ব্রিটিশ ভারত

অভিভাবক

আবদুর রাশেদ (বাবা)
জোবেদা খাতুন (মা)

দাম্পত্য সঙ্গী

লতিফা কোহিনূর

সন্তান

মৌলি আজাদস্মিতা আজাদ

অনন্য আজাদ

বাংলাদেশ মানেই বিখ্যাত সব কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক এবং লেখকদের পীঠস্থান | এখানে এতসব দুর্দান্তমানের কথাসাহিত্যিক এবং ভাষাবিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে যাদের সারাবিশ্ব তাদের সাহিত্য কর্মের জন্য এখনো কুর্নিশ জানায় | তেমনই এক অসাধারণ ঔপন্যাসিক তথা ভাষাবিজ্ঞানী হলেন হুমায়ুন আজাদ |

তিনি বাংলাদেশের এমন একজন লেখক ছিলেন যিনি কিনা খোলাখুলি ভাবে প্রথাবিরোধী লেখা লিখতে ভালোবাসতেন | যারজন্য তাঁকে অনেক বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয় | কিন্তু সেটার ভয়ে তিনি কোনোদিন তাঁর সেইসমস্ত ধরনের লেখা বন্ধ করে দেননি বরং আরো নতুন উদ্যমের সাথে তাঁর লেখা চালিয়ে গেছেন |

Early life of Humayun Azad:

হুমায়ুন আজাদের জন্ম হয় ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশের  বিক্রমপুরের কামারগাঁয় | তিনি যখন জন্মেছিলেন সেইসময় তাঁর জন্মস্থান ব্রিটিশ ভারতের অধীনস্থ ছিলো পরে অবশ্য সেটা বাংলাদেশের অন্তর্গত হয়ে যায় ১৯৭১ সালে |

তাঁর বাবার নাম ছিলো আবদুর রাশেদ ও মায়ের নাম ছিলো জোবেদা খাতুন | তাঁর বাবা আবদুর রাশেদ প্রথমজীবনে ছিলেন একজন শিক্ষক, পরবর্তী সময়ে তিনি সেইকাজ ছেড়ে দিয়ে হয়ে যান পোস্টমাস্টার এবং তারও পরে তিনি সেই কাজও ছেড়ে দিয়ে ব্যবসার কাজে নিজেকে যুক্ত করেন | অন্যদিকে তাঁর মা জোবেদা খাতুন ছিলেন সাধারণ একজন গৃহকর্ত্রী |

তোমাকে একটা কথা জানিয়ে দিই যে, ছোটবেলা থেকেই কিন্তু হুমায়ুন আজাদের নাম হুমায়ুন আজাদ ছিলোনা বরং সেটা ছিলো হুমায়ুন কবীর | ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি তাঁর নাম পরিবর্তনের মাধ্যম বর্তমান নামটা ধারণ করেন |

তাঁর দুই ভাই ও দুই বোন ছিলো এবং তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সবথেকে বড় |  

Education life of Humayun Azad:

হুমায়ুন আজাদের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রাঢ়িখাল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে | সেখানে তিনি প্রায় তিন বছর অধ্যয়ন করেন ইনফ্যান্ট থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত । এরপর ১৯৫২ সালে তিনি ভর্তি হন রাড়িখালের স্যার জে সি বোস ইনস্টিটিউশনে এবং সেখানে একদম তৃতীয় শ্রেণী বাদ দিয়ে সরাসরি চতুর্থ শ্রেণী থেকে পড়াশোনা শুরু করেন |

ছোটবেলা থেকেই হুমায়ুন আজাদ  পড়াশোনায় ভীষন মেধাবী ছিলেন এবং স্কুলের প্রত্যেকটা পরীক্ষায় ভালো ফল করতেন | তিনি সেই ইনস্টিটিউশন থেকেই ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন এবং সেটাতে উত্তীর্ণও হন ।

এরপর ১৯৬২ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় চলে আসেন এবং সেখানে অবস্থিত ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন ও ১৯৬৪ সালে সেই কলেজ থেকেই তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ভালো ফলাফল করে | 

সেইবছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগে, বাংলা নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে তিনি সেখান থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি ও ১৯৬৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন । উভয় পরীক্ষায় তিনি ফার্স্টক্লাস পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হন |

Work life of Humayun Azad:

হুমায়ুন আজাদ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৯ সাল থেকে | সেইসময় তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ২২ বছর | তিনি চট্টগ্রাম কলেজে তখন অধ্যাপনা করাতেন | তারপর সেখানে কিছু বছর কাজ করার পর ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত হন|

এছাড়া ঠিক সেই বছরেই ১২ ডিসেম্বর তারিখে তিনি আবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসাবেও নিযুক্ত হন ।

তারপর ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডে চলে যান ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে এবং এর ঠিক তিন বছর পর অর্থ্যাৎ ১৯৭৬ সালে তিনি সেখানকার এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন |

আরো পড়ুন: হুমায়ূন আজাদের উক্তি

তাঁর গবেষনার বিষয়বস্তু ছিলো বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ (Pronominalization In Bengali), যার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে “প্রোনোমিনালাইজেশন ইন বেঙলি” নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড” থেকে |

দেশে ফিরে আসার পরপরই তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত করা হয় ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর তারিখে |  পরবর্তীকালে সেই বিভাগের তিনি সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন ও ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক পদেও উন্নীত হন ।

এ মা তোমাকে তো একটা কথা তাঁর বিষয়ে বলাই হলোনা, ১৯৮৪ সালে হুমায়ুন আজাদ বাংলা ভাষার বাক্যতত্ত্বের উপর “বাক্যতত্ত্ব” নামে একটা বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন । সেই বছরই তিনি সেই একাডেমি থেকে আবার “বাংলা ভাষা” নামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলনও প্রকাশ করেন |

এই দুটো খন্ড প্রকাশ করার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো একটাই, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত একশো বছরেরও বেশি বিভিন্ন সাহিত্যিক ও ভাষাবিদদের লেখা ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা গুলো সংকলিত হয় সেইজন্য ।

আজও এই তিনটে গ্রন্থকে বাংলা ভাষাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে মনে করা হয় |

Marriage of Humayun Azad:

১৯৬৮ সালে এমএ পড়ার সময় হুমায়ুন আজাদ লতিফা কোহিনুর নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাঁকে ভালোবেসে ফেলেন | অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১২ই অক্টোবর তাদের বিয়ে হয় টেলিফোনে কথা বলার মাধ্যমে |

হ্যাঁ বন্ধু, তুমি ঠিকই পড়েছ, কথাটা তোমার হাস্যকর লাগলেও এটাই সত্যি কথা | টেলিফোনেই তাদের বিয়ে হয় | কারণ সেইসময় তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডে আর লতিফা কোহিনুর ছিলেন বাংলাদেশে | তাদের দুজনের তিনটে সন্তান হয়, যাদের যথাক্রমে নাম হলো- মৌলি আজাদ,  স্মিতা আজাদ এবং এক ছেলে অনন্য আজাদ |

Literary life of Humayun Azad:

হুমায়ুন আজাদের সাহিত্য জীবন শুরু হয় ক্লাস নাইন থেকেই | সেইসময় “ঘড়ি বলে টিক টিক” নামে তাঁর একটা প্রবন্ধ বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংবাপত্র “দৈনিক ইত্তেফাক”-এ প্রকাশ পায় | কিন্তু তিনি পাকাপাকি ভাবে সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর কবিতা লেখার মাধ্যমে |

তাঁর প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৭টা, এছাড়াও ১২টি উপন্যাস, ২২টি সমালোচনামূলক গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ষাটেরও বেশি গ্রন্থ তাঁর জীবনকালে এবং মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ।

তাঁর লেখা কিছু বিখ্যাত সৃষ্টিকর্মগুলো যথাক্রমে-

ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল (১৯৯৪), সব কিছু ভেঙে পড়ে (১৯৯৫), মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ (১৯৯৬), রাজনীতিবিদগণ (১৯৯৮), কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ (১৯৯৯), পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪), একটি খুনের স্বপ্ন (২০০৪), উপন্যাসসমগ্র ১ (২০০১),  উপন্যাসসমগ্র ২ (২০০২), উপন্যাসসমগ্র ৩ (২০০৩), অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩), জ্বলো চিতাবাঘ (১৯৮০), কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু (১৯৯৮), পেরোনোর কিছু নেই (২০০৪), যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৭), কাব্যসংগ্রহ (১৯৯৮, ২০০৫) প্রভৃতি|

Awards and Achivements of Humayun Azad:

বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৬), অগ্রণী ব্যাংক-শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৪) এবং একুশে পদক (২০১২)

Death of Humayun Azad:

২০০৪ সালের ৭ আগস্ট, জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান হুমায়ুন আজাদ এবং তার ঠিক ৪ দিন পর অর্থ্যাৎ ১১ আগস্ট তারিখে সেখানকার একটা অনুষ্ঠান থেকে রাত্রে ফিরে আসার পর এপার্টমেন্টেই আকস্মিকভাবে তাঁর মৃত্যু হয় |

পরেরদিন ১২ই আগস্ট সকালে তাঁকে তাঁর নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় | এরপর জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে মিউনিখে তাঁর এপার্টমেন্ট থেকে পাওয়া সব জিনিসপত্র ঢাকায় তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় |

ওই জিনিসপত্রের ভেতরেই পাওয়া যায় তাঁর হাতের লেখা তিনটে চিঠি, যেগুলো তিনি লিখেছিলেন তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলের উদ্দেশ্যে | মনে করা হয়,  ওই চিঠিগুলোতে লেখা শব্দগুলোই ছিলো তাঁর জীবনের শেষ লেখা ।

আরো পড়ুন: হুমায়ূন আহমেদের জীবনী 

অবশেষে তার মরদেহ কফিনে করে জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয় । এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পাঠ শেষে তাঁর মরদেহ রাঢ়িখালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় |

আশা করি তুমি “Humayun Azad Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |

শেয়ার করুন: on Twitter on Facebook on Google+

ধর্ম

ইসলাম

জাতীয়তা

ব্রিটিশ ভারত ব্রিটিশ ভারত (আগস্ট ১৯৪৭)
বাংলাদেশ (১৯৭১ – ২০০৪)

পেশা

কবি, সমালোচক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, অধ্যাপক

মৃত্যু

১১ আগস্ট ২০০৪ মিউনিখ, জার্মানি

সমাধিস্থল

রাঢ়িখাল, বাংলাদেশ